আইল্যান্ডের একজন খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক মরণঘাতী ক্যানসার এবং ব্যক্তিগত ঝড়-ঝাপটাকে অতিক্রম করে সাহিত্যে আকাশছোঁয়া সাফল্য অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে দেশের উত্তর উপকূল মালিন হেডে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বুকারজয়ী এই লেখক এ পর্যন্ত পাঁচটি উপন্যাস রচনা করেছেন, যার সর্বশেষ ‘প্রফেট সং’ (Prophet Song)। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে আয়ারল্যান্ড ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দীর্ঘ, কাব্যিক বাক্য ব্যবহার না করে লেখা এই কাহিনী পাঠককে এক অস্বস্তিকর এবং দমবন্ধ করা জগতে নিয়ে যায়।
বুকার পুরস্কার জেতা বইটি সাহিত্য সমালোচকেরা করম্যাক ম্যাককার্থি এবং উইলিয়াম ফকনারের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি আইরিশ সাহিত্যের নবজাগরণ এবং নিজের বিষাদময় বিশ্বদর্শন নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
বুকার জেতার পরের জীবন সম্পর্কে তিনি জানান, এখন আর সময় গণনা করেন না, বরং সাক্ষাৎকারের সংখ্যা দিয়ে বুঝেন তার দিনগুলো কেমন গেছে। বড়দিনে ১০০টি সাক্ষাৎকার করেছিলেন, বর্তমানে তা প্রায় ১৭০-তে পৌঁছেছে। পুরস্কার পাওয়া এখনও অবিশ্বাস্য মনে হয়, যদিও তার আট বছরের মেয়ে এতে উৎসাহ দেখায় না। একবার মেয়ে বলেন, “রাস্তায় লোকজন ‘অভিনন্দন’ বললে আমার ভালো লাগে না।”
গত কয়েক বছর তার জীবনে নানা দুঃসময় এসেছিল। বুকার সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম উঠার ঠিক এক বছর আগে ক্যানসারের অপারেশন টেবিলে ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তার ছেলের জন্ম হয় এবং অসুস্থতার মাঝে অপ্রত্যাশিতভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বুকার জয়ের মুহূর্তের একটি ছবি আছে, যেখানে সম্পাদক তাকে জড়িয়ে ধরেছেন, আর এজেন্ট হাততালি দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি তখন দুই হাতে মুখ ঢেকে ছিলেন। পরের কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে সামলে নেন এবং সৌভাগ্যক্রমে বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ।
‘প্রফেট সং’ লেখার আগে একটি ভুল উপন্যাসের কাজ করছিলেন। ছয় মাস ধরে কাজ করতে করতে মনে হয়েছিল যেন নিছক নিরর্থক প্রচেষ্টা করছেন। একদিন হাল ছেড়ে দেওয়ার পর সোমবার শান্তভাবে টেবিলে ফিরে প্রথম পাতার ভাবনা মাথায় আসে। সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেন, এটি সেই প্রকৃত উপন্যাস যা তিনি খুঁজছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন জীবনে হঠাৎ পথ পরিবর্তনের গুরুত্ব রয়েছে।
উপন্যাসটি ২০১৮ সালে লেখা শুরু হলেও তা ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা সংকটের প্রতিচ্ছবি মনে করায়। তিনি বলেন, বইটি আধুনিক বিশ্বের অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের গল্প একসাথে বলে।
আইরিশ সাহিত্যের উত্থানকে তিনি সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। একসময় ধর্মের ছায়ায় থাকা দেশ এখন বিশ্বজনীন ইউরোপীয় পরিচয়ের দিকে এগোচ্ছে। তার মতে, এই সামাজিক পরিবর্তন সাহিত্যকে জাগ্রত করেছে। ‘প্রফেট সং’ যদিও একটি বৈশ্বিক উপন্যাস, তবে তা নিঃসন্দেহে আইরিশ।
শৈশবে স্কুলে কঠিন অভিজ্ঞতা থাকার পরও তিনি নিজের সাহিত্যিক পথ তৈরি করেছেন। ইংরেজি শিক্ষকের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ার পরও পরিবারের সহায়তায় আবার ক্লাসে ফিরে আসেন। এরপর তিনি টমাস হার্ডি, টি.এস. এলিয়ট, শেক্সপিয়রের মতো লেখকদের কাজ গভীরভাবে অনুধাবন করেন।
এখনও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। সাক্ষাৎকার বা ভ্রমণের দিনগুলো বাদ দিয়ে লেখার চেষ্টা করেন। তবে বুকার জয়ের পর মানসিক শক্তি কমে গেছে। অন্যান্য বুকার বিজয়ী লেখকরা জানিয়েছেন, এমন পুরস্কারের প্রভাব কম দেখানো যায় না।
ফাঁকা সময়ে তিনি সুপারমার্কেটে ঘুরে বেড়ান, রান্না করেন, জ্যাজ সংগীত শুনেন, ক্লাসিক সিনেমা দেখেন এবং বই পড়েন। তার প্রিয় সিরিজ ‘দ্য বেয়ার’।
নিজের বিশ্বদর্শনকে তিনি ‘বিষাদময়’ উল্লেখ করেছেন। তার বইগুলো জীবনের আধ্যাত্মিক দিক, দুঃখ এবং হারানোর অনিবার্যতা নিয়ে কথা বলে। যদিও ধারণাগুলো প্রাচীন মনে হতে পারে, আধুনিক সময়েও এগুলো নিয়ে চিন্তা করা জরুরি।
একটি কৌতুক দিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার শেষ করেন। একটি কাঠঠোকরা বারটেন্ডারের কাছে জিজ্ঞেস করে, “মাফ করবেন, বারটেন্ডার কি এখানে আছেন?”