Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশমাগুরায় খালে গোসল করতে নেমে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু, পাশাপাশি কবরেই চিরনিদ্রায়

মাগুরায় খালে গোসল করতে নেমে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু, পাশাপাশি কবরেই চিরনিদ্রায়

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। বাড়ির পাশের খালে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে তিন শিশু। একই বয়সী, পাশাপাশি বাড়ির এই তিনটি ছোট প্রাণের অকাল মৃত্যুতে পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।

রোববার সকালে কানুটিয়া স্কুল মাঠে জানাজা শেষে ওমেদপুর গোরস্থানে পাশাপাশি কবরেই দাফন করা হয় শিশু তিনটিকে। নিহতরা হলো—চাপাতলা গ্রামের তরিকুল বিশ্বাসের মেয়ে তানহা ইসলাম তরী (৯), সাজ্জাদ মল্লিকের মেয়ে সামিয়া আক্তার সিনথিয়া (৯) এবং আনারুল ইসলামের মেয়ে তারিন ইসলাম (৮)। তানহা ও সামিয়ার পরিবারে আত্মীয়তা রয়েছে, আর তারিন তাঁদের প্রতিবেশী। তিনজনই স্থানীয় তিনটি পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সারি, প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। প্রত্যেকেই ছিল নিজ নিজ পরিবারের বড় সন্তান।

তানহার মা রত্না বেগম জানান, কয়েক বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে তিনি দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। ফরিদপুরের এক জুটমিলে চাকরি করে সংসার চালান। কণ্ঠ ভারী হয়ে তিনি বলেন, “দুপুরে মেয়েকে বাড়িতে রেখে কাজে গিয়েছিলাম। বেলা দুইটার দিকে খবর পাই কিছু হয়েছে। ছুটে এসে দেখি আমার মেয়েটা আর নেই।”

সামিয়া আক্তারের বাবা ঢাকায় চাকরি করেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বাড়িতে ফিরেছেন, তবে শোকে এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সামিয়ার দাদা জানান, “আমি তখন নামাজে দাঁড়িয়েছি। দুটো মেয়ে এসে সিনথিয়াকে ডেকে নিয়ে গেল খালে গোসল করতে। আমি কিছু বলতে পারিনি। কিছুক্ষণ পরেই শুনি তারা ডুবে গেছে।”

তিন শিশুর মধ্যে সামিয়াই একমাত্র সাঁতার জানত। অন্য দুজনের ছিল না সে অভিজ্ঞতা। তারিন ইসলামের মা রাফেজা বেগম জানান, “ও সাঁতার জানত না। প্রতিদিন টিউবওয়েলে গোসল করে। গতকাল বলল পাশের বাড়ির দাদির সঙ্গে গোসল করতে যাচ্ছে। পরে শুনি ওরা একাই খালে গেছে।”

স্থানীয়দের মতে, চাপাতলার খালে সাধারণত পানি কম থাকে, তবে স্লুইসগেট বন্ধ থাকলে পানি বেড়ে যায়। ঘটনাদিনে খালে পানির গভীরতা ছিল প্রায় ৬-৭ ফুট। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, “যেখান থেকে ওদের উদ্ধার করা হয়, সেখানে পানি গভীর ছিল। হয়তো তারা না বুঝেই খালের খাদে নেমেছিল। আমাদের এলাকায় এমন দুর্ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।”

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, শনিবার দুপুরে তিন শিশু একসঙ্গে গোসলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। বেলা দুইটার দিকে তারা খালে নামে, এরপর আর ফিরে আসে না। কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা খালের ধারে কাপড় ভাসতে দেখে সন্দেহ করেন। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করে শিশু তিনটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

আজ সকালে তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেয় আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ। শিশুদের অকাল মৃত্যুতে শোকাবহ পরিবেশে মুখ ভার সকলের। স্থানীয় এক বাসিন্দা মতিয়ার মল্লিক বলেন, “এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে, শিশুদের সাঁতার শেখানো এখন সময়ের দাবি।”

চাপাতলা গ্রামের এই করুণ ঘটনায় পুরো মহম্মদপুর উপজেলা স্তব্ধ। পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী—সবাই শোকাভিভূত। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা তিনটি ছোট জীবনের এমন আকস্মিক পরিসমাপ্তি যেন সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে—অবহেলা আর অসতর্কতার মূল্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments