Tuesday, December 23, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশমহসিন স্কুলে পাহাড় কাটায় প্রকল্প থমকে গেল

মহসিন স্কুলে পাহাড় কাটায় প্রকল্প থমকে গেল

চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পাহাড় কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা পরিবেশ সুরক্ষা-সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের শামিল। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা এই কাজ বন্ধ রয়েছে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বরে পাহাড়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু গাছও সরানো হয়েছে। এরপর সেগুলো পরিষ্কার করে জমি সমতল করার কাজ চলছিল।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ভবন নির্মাণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তবে ২৭ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক লিখিতভাবে জানিয়ে দেন যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা কাটার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তবুও অনুমতি ছাড়া কাজ চালিয়ে যাওয়া হয় এবং ভবন নির্মাণের প্রস্তুতির আড়ালে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি স্বীকার করে জানান যে শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, পাহাড় সামান্য কাটার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা বেশি কাটা হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক বলেন যে পাহাড় ও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের কোনো আইনগত সুযোগ নেই এবং আইন লঙ্ঘন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পরামর্শ দেন।

প্রকল্প পরিচালক জানান যে পাহাড় কাটার বিষয়টি সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কতোটা অংশ কাটা হয়েছে এবং এর কারণ কী, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ প্রকল্পটি ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে, যার অধীনে সারাদেশে ৩২৩টি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রামের অন্যান্য চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ এগোলেও মহসিন স্কুলে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় প্রকল্পের দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী জানান যে এক সপ্তাহের মধ্যেই দরপত্র বাতিল করা হবে। পাঁচতলা ভবনের জন্য নির্ধারিত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

অতীতে পাহাড় কাটার ঘটনায় অর্থদণ্ড দিয়ে নিষ্পত্তির প্রবণতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে ৮০টি মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই জরিমানা দিয়ে মীমাংসিত হয়েছে।

২ ডিসেম্বর পাঁচ পরিবেশকর্মী বিদ্যালয়ে গিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁদের একজন জানান, গাছ কাটার খবর শুনে গিয়ে তাঁরা পাহাড়ও কাটতে দেখেন, আরও কাটার প্রস্তুতিও ছিল। তাঁদের দাবি, পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের দৃষ্টান্ত আর তৈরি হতে দেওয়া যাবে না।

চট্টগ্রামে পাহাড় ধ্বংসের ইতিহাস দীর্ঘ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা বলছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টর পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে যেখানে পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার, ২০০৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ পাহাড় বিলীন হয়েছে, বেড়েছে মাটি ধস, বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শাস্তির মাত্রা কঠোর না হলে পাহাড় কাটার অনিয়ম থামবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক বলেন, উন্নত দেশগুলো পাহাড় অক্ষত রেখে স্থাপনা নির্মাণ করে, কারণ পাহাড় পরিবেশগত ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনো পরিস্থিতিতেই পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments