Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যমস্তিষ্কের সুরক্ষায় কমান মদ্যপান

মস্তিষ্কের সুরক্ষায় কমান মদ্যপান

অনেকের কাছে আরামদায়ক সন্ধ্যায় এক গ্লাস ওয়াইন বা খেলাধুলার আসরে ঠান্ডা বিয়ারের ক্যান খুলে বসা এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই পান করার অভ্যাস কখন বিপজ্জনক হয়ে ওঠে?

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন তিন বা তার বেশি গ্লাস অ্যালকোহল সেবন করলে তা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (ব্লিডিং স্ট্রোক) ঝুঁকি বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ক্ষতি ঘটায়। গবেষণাটি ৫ নভেম্বর নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

একজন বিশেষজ্ঞের মতে, “মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা ইন্ট্রাসেরেব্রাল হেমোরেজ তখনই ঘটে যখন মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে আশপাশের টিস্যুতে রক্ত লিক করে। সব ধরনের স্ট্রোকের প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশই এই ধরনের।”
তিনি আরও জানান, “অন্যদিকে, প্রায় ৮০ শতাংশ স্ট্রোকই ইস্কেমিক স্ট্রোক, যেখানে রক্তনালী বন্ধ হয়ে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের অংশবিশেষ মারা যায়। তবে ব্লিডিং স্ট্রোক সাধারণত বেশি বিপজ্জনক ও অক্ষমতাজনক।”

মার্কিন স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ‘বিঞ্জ ড্রিংকিং’-এ অভ্যস্ত, এবং ৬ শতাংশ নিয়মিত ভারী মদ্যপান করেন। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ২৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক অ্যালকোহল ব্যবহারে আসক্ত বা ‘অ্যালকোহল ইউজ ডিসঅর্ডার’-এ ভুগছেন।

গবেষণার প্রধান লেখক জানিয়েছেন, “যারা প্রতিদিন গড়ে তিন গ্লাস অ্যালকোহল সেবন করেন, তাদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অন্যদের তুলনায় গড়ে ১১ বছর আগে ঘটে।”

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৭,৯৫,০০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশই ব্লিডিং স্ট্রোক।
একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মহামারীবিদ জানান, “দুর্ভাগ্যবশত, শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে, বিশেষ করে ৫৫ বছরের পর থেকে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন।”

বর্তমানে প্রায় ৪৭% আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক—অর্থাৎ প্রায় ১১৯.৯ মিলিয়ন মানুষ—উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও নাক থেকে রক্ত পড়া অন্যতম।

গবেষকরা আরও বলেন, “অবৈধ মাদকদ্রব্য যেমন কোকেইন, মেথঅ্যামফেটামিন, হেরোইন ইত্যাদিও স্ট্রোকের বড় কারণ। অ্যালকোহল ও এসব উত্তেজক পদার্থ রক্তচাপ বাড়ায়, ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।”

স্ট্রোক ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ধমনীর রোগের কারণ হতে পারে। তাই যাদের আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, বা এমআরআই রিপোর্টে দেখা যায় মাইক্রোব্লিডের মতো ঝুঁকি আছে, তাদের অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা উচিত। প্রয়োজনে বছরে সর্বোচ্চ ছয়বার, এবং এক দিনে এক গ্লাসের বেশি নয়—এমন পরামর্শ দিয়েছেন একজন ভাস্কুলার নিউরোলজিস্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো, প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ, এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।

নিয়মিত হাঁটাচলা, সঠিক ভঙ্গিতে হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, এবং নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে লবণের ব্যবহার কমানো এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস (Mediterranean diet) অনুসরণ করাও হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

গবেষণাটি ১,৬০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর ওপর পরিচালিত হয়, যাদের গড় বয়স ছিল ৭৫ বছর এবং তারা সবাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ রোগী ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত হাসপাতালের ভর্তি রোগী।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যেহেতু তথ্যগুলো পূর্বের রোগীদের রেকর্ড থেকে নেওয়া হয়েছে, তাই কিছু ক্ষেত্রে অ্যালকোহল সেবনের পরিমাণ বাস্তবের চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে। তবে ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments