ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের ওয়াশপিট এলাকায় ভোরের নিস্তব্ধতা ভাঙল হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখায়। আজ বুধবার ভোর সোয়া চারটার দিকে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোকাল ট্রেনের বগিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাঁদের ধাওয়া খেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় স্টেশন এলাকা ছেড়ে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও এক বগির কয়েকটি আসন পুড়ে যায়।
ঘটনাস্থলটি স্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্মের বাইরের অংশে অবস্থিত ওয়াশপিট এলাকা। সেখানেই প্রতিদিন বিভিন্ন কোচ ধোয়ামোছা করে প্রস্তুত রাখা হয়। এই ওয়াশপিট এলাকা সাধারণত কম আলোয় ঢাকা থাকে। নিরাপত্তা বাহিনীর এক পরিদর্শক জানান, দুর্বৃত্তরা এই অন্ধকার পরিবেশকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। তাঁর ভাষায়, ভোরের দিকেই নাশকতার উদ্দেশ্যে একদল ব্যক্তি পেট্রল নিয়ে এসে ট্রেনের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগার সাথে সাথেই নিরাপত্তা সদস্যরা দ্রুত ছুটে যান এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য প্রথমে আগুন দেখে তা নেভানোর উদ্যোগ নেন। তাঁদের নজরে আসে যে কাছেই একটি দুর্বৃত্ত অবস্থান করছে। তাঁরা তাকে ধাওয়া করলে সে দ্রুত অন্ধকারের মধ্যে পালিয়ে যায়। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে চারপাশে পানি না পেয়ে নিরাপত্তা সদস্যরা নিজেদের জ্যাকেট খুলে তা পানিতে ভিজিয়ে আগুনের ওপর চাপা দেন। এরপর ধাপে ধাপে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। তাঁদের দ্রুত পদক্ষেপই ট্রেনটিকে বড় ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে বলে জানান পরিদর্শক।
এ ঘটনার পর স্টেশনের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। ওয়াশপিট এলাকা বিশেষভাবে নজরদারির আওতায় নেওয়া হয়েছে এবং চারদিকে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। ট্রেনের বগিতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা যে পরিকল্পিত নাশকতার অংশ হতে পারে তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের বগিতে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্ট নাশকতামূলক কাজ। ঘটনাস্থল থেকে পুড়ে যাওয়া একটি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে এর সঙ্গে কারা জড়িত থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তদন্তের সুবিধার্থে স্টেশনজুড়ে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সকালে স্টেশনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায়। যদিও আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, তারপরও অনেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে মত দেন। কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে যে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো অতিরিক্ত বিলম্ব তৈরি হয়নি।
রেলওয়ে প্রশাসন মনে করছে, উদ্দেশ্য ছিল বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করা। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। তদন্ত শেষ হলে পুরো ঘটনার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।



