যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্যে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন, যা অনেকের মতে বর্তমান প্রশাসনের জনপ্রিয়তা ও বিরোধী দলের অবস্থান পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি থাকতে এই ভোটযুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
ভোট অনুষ্ঠিত হবে মূলত ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভানিয়া ও টেক্সাসে। প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচনে মূল ফোকাস বিভিন্ন হলেও, সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে — অর্থনৈতিক চাপ, কর বৃদ্ধি, জ্বালানি ব্যয় এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে জনগণের প্রতিক্রিয়া ভোটের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচন:
নিউ ইয়র্ক সিটিতে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একজন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, যিনি তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, এবং একজন সাবেক গভর্নর যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন একজন রিপাবলিকান প্রার্থীও। এই নির্বাচনকে নিউ ইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ দিকনির্দেশনার জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটদের মধ্যকার এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী বছরের প্রাইমারি নির্বাচনের দিকেও প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, প্রার্থীদের ইসরায়েল বিষয়ক অবস্থান ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার ধরনও ভোটারদের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখছে।
নিউ জার্সি গভর্নর নির্বাচন:
নিউ জার্সিতে মেয়াদোত্তীর্ণ গভর্নরের পরিবর্তে নতুন গভর্নর নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজ্যে ক্রমবর্ধমান কর ও ইউটিলিটি বিলের কারণে ‘আর্থিক সক্ষমতা’ বা affordability এখন মূল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। একদিকে সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, অন্যদিকে ট্রাম্প-সমর্থিত রিপাবলিকান প্রার্থী — দুই পক্ষই রাজ্যের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় ও জ্বালানির খরচ নিয়ে তুমুল প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নিউ জার্সি ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটপন্থী হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিপাবলিকানদের অবস্থান কিছুটা শক্ত হয়েছে। ফলে এই নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
ভার্জিনিয়া গভর্নর নির্বাচন:
ভার্জিনিয়ার গভর্নর পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক রিপাবলিকান নারী প্রার্থী, যিনি মূলত শিক্ষা ও জেন্ডার নীতিকে প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছেন, এবং এক সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য, যিনি ট্রাম্পবিরোধী অবস্থানকে মূল বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
রাজ্যটি ওয়াশিংটন ডিসির কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে বহু ফেডারেল কর্মচারী বসবাস করেন, যারা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হয়েছেন। ফলে এই নির্বাচনের ফল ট্রাম্প প্রশাসনের জনসমর্থনেরও একটি পরিমাপক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান ইস্যু: ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি
এই বছরের নির্বাচনী প্রচারণায় একটি নতুন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে — ইউটিলিটি বা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের খরচ। ২০২০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিদ্যুৎমূল্য বেড়ে গেলেও গত এক বছরে তা আরও তীব্র আকার নিয়েছে। নিউ জার্সিতে বিদ্যুৎমূল্য ২১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জাতীয় গড়ের প্রায় তিনগুণ। এই ইস্যুতে দুই দলের প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রিপাবলিকানরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির নীতিকে দায়ী করছেন, অপরদিকে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ইউটিলিটি রেট সাময়িকভাবে স্থির রাখার।
ক্যালিফোর্নিয়ার রিডিস্ট্রিকটিং ভোট:
ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ভোটটি মূলত কংগ্রেসীয় আসন পুনর্বিন্যাস (redistricting) সংক্রান্ত। সেখানে একটি প্রস্তাব পাস হলে ডেমোক্র্যাট দল কিছু রিপাবলিকান আসন দখলের সুযোগ পেতে পারে। এটি ভবিষ্যতের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পেনসিলভানিয়া সুপ্রিম কোর্ট ভোট:
পেনসিলভানিয়ায় ভোটাররা তিনজন বিচারকের পদে পুনর্নিয়োগের পক্ষে বা বিপক্ষে মত দেবেন। এই আদালতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ ভোট গণনা ও ডাকযোগে ভোটের নীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
টেক্সাসে বিশেষ নির্বাচন:
টেক্সাসের হিউস্টন এলাকাভিত্তিক কংগ্রেসনাল আসনে বিশেষ নির্বাচনও হচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে ওই আসনটি শূন্য ছিল। একাধিক প্রার্থী, যার মধ্যে স্থানীয় আইনজীবী, রাজ্য প্রতিনিধি ও সাবেক কাউন্সিল সদস্য রয়েছেন, এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদি কোনো প্রার্থী ৫০% ভোট না পান, তাহলে রানঅফ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এইসব রাজ্যে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের নির্বাচনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আগামী রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জনপ্রিয়তার চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট করে তুলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।



