Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeআবাসন- আপনার ঠিকানাভূমি সেবায় নতুন দিগন্ত: ডিজিটাল রূপান্তর ও স্বচ্ছ প্রশাসনে সাফল্যের গল্প

ভূমি সেবায় নতুন দিগন্ত: ডিজিটাল রূপান্তর ও স্বচ্ছ প্রশাসনে সাফল্যের গল্প

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ভূমি সংক্রান্ত কাজ ছিল সবচেয়ে জটিল ও ভোগান্তিপূর্ণ একটি বিষয়। জমির খতিয়ান, নামজারি, কর পরিশোধ কিংবা দলিলের কাগজপত্র সংগ্রহ—এসব প্রক্রিয়ায় মানুষকে পড়তে হতো দালালচক্র, দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রিতার মুখে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই চিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে।

ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে সহজ সমাধান

ভূমি সেবায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালুর ফলে। এখন নাগরিকরা একক অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে খতিয়ান যাচাই, নামজারি আবেদন, ভূমি কর পরিশোধ ও দলিল সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সেবা ঘরে বসেই পাচ্ছেন। এতে করে সেবা গ্রহণের জন্য আর ভূমি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।

অনলাইনে কর আদায়ে রেকর্ড সাফল্য

একসময় কর প্রদানে অনীহা ছিল ব্যাপক। জটিল প্রক্রিয়া মানুষকে নিরুৎসাহিত করত। বর্তমানে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থার কারণে কর প্রদান অনেক সহজ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভূমি কর আদায়ে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ। এতে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর প্রদানে আগ্রহী হচ্ছে।

গ্রামীণ পর্যায়ে সেবা বিস্তার

শুধু শহরে নয়, এখন গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে আধুনিক ভূমি সেবা। ইতোমধ্যে সারা দেশে শত শত সহায়তা কেন্দ্র চালু হয়েছে, যেখানে মানুষ সরাসরি নামজারি, খতিয়ান ও কর প্রদানের মতো সেবা পাচ্ছেন। এমনকি দুর্গম চরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও এই সেবার আওতা পৌঁছে গেছে, যা পূর্বে অকল্পনীয় ছিল।

চর উন্নয়ন ও নতুন সম্ভাবনা

প্রতিবছর নদীভাঙনে সৃষ্ট নতুন চরগুলোকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, গড়ে উঠছে নতুন বসতি, বাড়ছে কর্মসংস্থান। এতে স্থানীয় জীবনমান যেমন উন্নত হচ্ছে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিও উপকৃত হচ্ছে।

ভূমি মেলা: সচেতনতা ও আস্থা বৃদ্ধি

জনগণকে সরাসরি সেবা ও সচেতনতা প্রদানের জন্য নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে ভূমি মেলা। এসব মেলায় মানুষ অনলাইনে কর প্রদানের নিয়ম শিখছে, জাল কাগজপত্র থেকে সতর্ক থাকার উপায় জানতে পারছে এবং দালাল ছাড়া কিভাবে সেবা নেওয়া যায় তা শিখছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা আরও বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ভূমি সেবার ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। বিশেষ করে অনলাইন নামজারি প্রকল্পটি বৈশ্বিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ স্বীকৃতি প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সরকারি সেবাকে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখা সম্ভব।

আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার

ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়মিত আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে জমির প্রকৃত অবস্থা যাচাই ও তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়াতেও এসেছে ডিজিটাল পরিবর্তন—ক্ষতিগ্রস্তরা অনলাইনে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।

জনগণের আস্থা ফিরছে

একসময় ভূমি অফিস মানেই ছিল দুর্নীতি ও হয়রানি। কিন্তু এখন মানুষ বলছে, ভূমি অফিস সত্যিকারের সেবার জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতার কারণে জনগণের আস্থা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ডিজিটাল সেবা, স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা, গ্রামীণ সেবা বিস্তার, চর উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—সব মিলিয়ে এই খাত আজ জনবান্ধব প্রশাসনের প্রতীকে রূপ নিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমি প্রশাসনের রোল মডেল হয়ে উঠবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments