Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যভিসা জটিলতায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এখন ভারতের দিকে

ভিসা জটিলতায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এখন ভারতের দিকে

মার্কিন প্রশাসনের নতুন ভিসা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভারতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে দক্ষ কর্মীদের জন্য ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসার খরচ ও শর্ত কঠোর হয়ে যাওয়ায় এ প্রবণতা আরও জোরদার হয়েছে। এতে ভারতের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি)–এর বিকাশে নতুন গতি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভারতে প্রায় ১ হাজার ৭০০টির মতো জিসিসি কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা বিশ্বের মোট কেন্দ্রগুলোর অর্ধেকের বেশি। শুরুর দিকে এগুলো মূলত প্রযুক্তি ও সহায়তা খাতে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন বিলাসবহুল গাড়ির ড্যাশবোর্ড নকশা থেকে শুরু করে ওষুধ আবিষ্কারের মতো জটিল গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে যুক্ত হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বিদেশি কর্মী ভিসার সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রম কৌশল নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। ফলে ভারতের জিসিসিগুলোকে এখন বৈশ্বিক দক্ষতা ও দেশীয় নেতৃত্ব মিলিয়ে একটি স্থিতিশীল বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠানের জন্য এখন অভ্যন্তরীণ ইঞ্জিনের মতো ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি কয়েক হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১ লাখ ডলার করেছে। এতে দক্ষ বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরশীল মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে মার্কিন সিনেটে ভিসা নীতিমালা আরও কঠোর করার প্রস্তাব তোলা হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে বড় নিয়োগকর্তারা বর্তমান নিয়মের ফাঁকফোকর ব্যবহার করছে।

এই পরিস্থিতিতে আর্থিক সেবা ও প্রযুক্তি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই কাজ ভারতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে। বিশেষ করে সরকারি চুক্তিভিত্তিক মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে আরও দ্রুত তৎপর হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, বিশ্লেষণ, এবং পণ্য উন্নয়নের মতো উচ্চমূল্যের কাজের বড় অংশ ভারতে স্থানান্তরিত হবে। এতে আউটসোর্সিংয়ের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই কাজ রাখতে পারবে।

অনেক প্রতিষ্ঠান এই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে নিজস্ব জিসিসি স্থাপন করছে। ইতিমধ্যেই ফেডএক্স, বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, খুচরা বিক্রেতা ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, জেপি মরগান চেজ এবং ওয়ালমার্টের মতো বড় প্রতিষ্ঠান এইচ-১বি ভিসার শীর্ষ পৃষ্ঠপোষক। তবে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না।

ভারতের খুচরা জিসিসি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, বাড়তি কাজ হয়তো ভারতে স্থানান্তরিত হবে, নতুবা মেক্সিকো, কলম্বিয়া বা কানাডা এ সুযোগ নিতে পারে।

আগের ধারণা ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ২ হাজার ২০০–এর বেশি জিসিসি গড়ে উঠবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। কিন্তু নতুন ভিসা সীমাবদ্ধতার কারণে এই প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কড়াকড়ি ভারতের জন্য এক ধরনের সোনার খনি হয়ে উঠছে, যেখানে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টারগুলো আগামী দিনে আরও কৌশলগত ও উদ্ভাবননির্ভর দায়িত্ব নেবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments