Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeভ্রমণ টুকিটাকিভালো ঘুমের খোঁজে ভ্রমণ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’

ভালো ঘুমের খোঁজে ভ্রমণ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’

ভ্রমণ মানেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে নতুন জায়গা দেখা, নানা রকম খাবার চেখে দেখা, ছবি তোলা কিংবা স্মৃতির পাতায় নতুন গল্প যোগ করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের অর্থই যেন বদলে যাচ্ছে। এখন অনেকেই ছুটিতে যাচ্ছেন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে নয়, বরং একটুখানি নিশ্চিন্ত ঘুমের আশায়। এই নতুন প্রবণতাই বিশ্বজুড়ে পরিচিত হচ্ছে ‘স্লিপ ট্যুরিজম’ নামে—যেখানে ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্যই হলো ঘুমানো এবং শরীর–মনকে পুনরুজ্জীবিত করা।

দ্রুতগতির আধুনিক জীবনে ঘুম যেন এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে। কাজের চাপ, শহরের কোলাহল, ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি অতিনির্ভরতা—সব মিলিয়ে ঘুম এখন অনেকের কাছেই বিলাসিতা। ফলাফল হিসেবে দেখা দিচ্ছে নিদ্রাহীনতা, ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং শারীরিক অবসাদ। ঠিক এই কারণেই ভ্রমণপ্রেমীরা এখন এমন গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন, যেখানে নিস্তব্ধতা ও প্রশান্তির সঙ্গে মিলবে গভীর ঘুমের নিশ্চয়তা।

বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টগুলোও এখন এই প্রবণতাকে কেন্দ্র করে তৈরি করছে বিশেষ সেবা। সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, জাপান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রিসোর্টে চালু হয়েছে ‘স্লিপ প্যাকেজ’, যেখানে অতিথিদের দেওয়া হয় ঘুমবান্ধব পরিবেশ। এসব রিসোর্টে ব্যবহৃত হয় নীরব কক্ষ, ঘুম উপযোগী আলো, অ্যারোমাথেরাপি, সাউন্ড থেরাপি, মেডিটেশন সেশন এমনকি ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শও। কেউ কেউ আবার অতিথিদের ঘুমের মান বিশ্লেষণের জন্য ‘স্লিপ ট্র্যাকার’ সরবরাহ করে, যা হৃৎস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ঘুমের সময় বিশ্লেষণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণায় আরও জানা যায়, শুধু যুক্তরাজ্যেই ৭৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত এবং ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন অনিদ্রা ও ক্লান্তি দূর করতে। কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা, শহুরে কোলাহল এবং স্মার্টফোনের অতিনির্ভরতা মানুষকে ধীরে ধীরে গভীর ঘুম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ফলে ছুটি এখন আর কেবল বিনোদনের সময় নয়—এটি হয়ে উঠেছে শরীর ও মনকে পুনরায় রিসেট করার সুযোগ।

কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই ধারা আরও জোরদার হয়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন নিজেদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে। ফলে ‘ওয়েলনেস ট্রাভেল’ বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। অনেকেই এখন এমন রিসোর্ট খুঁজছেন, যেখানে ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে থেকে প্রকৃতির কোলে মিলবে গভীর ও স্বস্তিদায়ক ঘুম।

‘স্লিপ ট্যুরিজম’-এর মূল প্রক্রিয়াও বেশ পরিকল্পিত। ভ্রমণের আগে অতিথির ঘুমের অভ্যাস ও সমস্যা বিশ্লেষণ করা হয়, এরপর নির্ধারণ করা হয় তার উপযোগী পরিবেশ—যেমন কক্ষের তাপমাত্রা, আলো-আঁধারির সামঞ্জস্য, আরামদায়ক বিছানা-বালিশ, ঘুমের আগে হালকা যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন সেশন। কিছু রিসোর্ট আবার পাহাড়, জঙ্গল বা সাগরের ধারে এমন কটেজ তৈরি করেছে যেখানে কেবল প্রকৃতির শব্দই শোনা যায়—যা মন ও শরীরকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের ভ্রমণধারা হবে ‘ওয়েলনেস’ বা সুস্থতাকে ঘিরে। তাই স্লিপ ট্যুরিজম কোনো অস্থায়ী ট্রেন্ড নয়, বরং আধুনিক মানুষের জন্য এটি হয়ে উঠছে একান্ত প্রয়োজন। কারণ, ভালো ঘুমই এখনকার সবচেয়ে বড় বিলাসিতা—যা মানুষ খুঁজে নিচ্ছে প্রাকৃতিক প্রশান্তি ও নিরিবিলি পরিবেশে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments