বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে চাকরির জন্য শহরে চলে যাওয়ার বদলে অনেকেই এখন ফিরে যাচ্ছেন তাদের শৈশবের বাড়িতে। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, এখনকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ৩৫ বছরের নিচের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আগের তুলনায় বেশি নিজেদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। দশ বছরের ব্যবধানে এই হার বেড়েছে ৬.৩ শতাংশ—যা তরুণ জনসংখ্যার মোট বৃদ্ধি হারের দ্বিগুণেরও বেশি।
এই পরিবর্তনের মূল কারণ “অসহনীয় ভাড়ার চাপ”। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শহরাঞ্চলে গড় ভাড়া প্রতি বছর প্রায় ৪ শতাংশ করে বেড়েছে, অথচ পূর্ণকালীন কর্মীদের বেতন বেড়েছে বছরে মাত্র ০.৬ শতাংশ। ফলে নতুন স্নাতক বা কর্মজীবনের শুরুর দিকের মানুষদের জন্য বড় শহরে থাকা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই রকম জটিল। গত দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির মধ্যমমূল্য বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ—অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ৬ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে গড় বাড়ির দাম ৪ লাখ ডলারেরও বেশি। ফলে প্রথমবারের মতো বাড়ি কেনার বয়স এখন প্রায় ৩৮ বছর, যেখানে দশ বছর আগেও এই বয়স ছিল ৩১।
কেন বাড়ছে ভাড়া?
অর্থনীতির নিয়ম বলছে—চাহিদা বাড়লেও যদি সরবরাহ না বাড়ে, তাহলে দাম বাড়বেই। যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে ঠিক সেটাই ঘটছে। শহরগুলোতে নতুন বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেতে হয় জটিল পরিকল্পনা ও জোনিং আইনের মুখোমুখি হয়ে। বাণিজ্যিক জমিকে আবাসিক হিসেবে পুনর্নির্ধারণ করতে প্রচুর কাগজপত্র ও দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তিতেও অনেক সময় নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।
তবে টেক্সাসের অস্টিন শহর দেখিয়েছে ভিন্ন পথ। শহরটি তাদের জোনিং নীতিমালা শিথিল করার পর ব্যাপক হারে বাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। এর ফলাফলও দেখা যায় দ্রুত—এক বছরে ভাড়া কমে যায় ১০ শতাংশ, দুই বছরের মাথায় কমে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে অস্টিনে তরুণদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাসের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বর্তমানে সেখানে মাত্র ৬ শতাংশ তরুণ কর্মজীবী বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন, যেখানে স্যান আন্তোনিওতে এই হার প্রায় ১৪ শতাংশ এবং লস অ্যাঞ্জেলসে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।
বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার সুবিধা ও অসুবিধা
অভিভাবকের সঙ্গে থাকলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্যয় অনেক কমে যায়। অনেকেই ভাড়া দেন না, আবার কেউ কেউ খুব কম দেন—যা বাড়ি কেনার জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ বাড়ায়। এ কারণেই ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বাড়ির মালিক হওয়ার হার সামান্য বাড়তেও দেখা গেছে।
তবে অসুবিধাও আছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস সামাজিক সম্পর্ক গড়তে বাধা দেয়, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এটি দেরিতে বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের প্রবণতাও বাড়াচ্ছে। এসব বিলম্ব এক সময় মানসিক চাপ ও আত্মতুষ্টির ঘাটতি তৈরি করছে—যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তাছাড়া, অনেক সময় বাবা-মায়ের বাড়ি শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে হওয়ায় তরুণদের কর্মস্থলে যাতায়াত কঠিন হয়। এর ফলে কর্মসন্তুষ্টিও কমে যায়। এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টির হার অন্য বয়সী কর্মীদের তুলনায় বেশি।
সামগ্রিক প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ
এই আবাসন সংকট কেবল তরুণদের নয়, বরং গোটা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। “হাউজিং থিওরি অব এভরিথিং” শীর্ষক এক বিশ্লেষণে বলা হয়—আবাসনের অপ্রতুলতা যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে। কারণ, মানুষ যখন ইচ্ছেমতো জায়গায় বসবাস বা কাজ করতে পারে না, তখন তারা নিজেদের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে না।
এছাড়া, আবাসন সংকটের কারণে পরিবার গঠনে বিলম্ব ঘটলে ভবিষ্যতে সামাজিক নিরাপত্তা ও সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনায়ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সমাধানও আছে—নতুন বাড়ি নির্মাণে সহজ নীতি প্রণয়ন, মৌসুমভিত্তিক বিশ্রাম, এবং তরুণদের জন্য আবাসন সুবিধা বাড়ানো। সহজ ভাষায়, বাসস্থান সহজলভ্য করা মানে তরুণদের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পথে অপ্রয়োজনীয় বাধা কমানো।



