Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসব্রিটেনে বাজেটের ভারসাম্য খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী: ভোটার ও বাজারের চাপে রিভস

ব্রিটেনে বাজেটের ভারসাম্য খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী: ভোটার ও বাজারের চাপে রিভস

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী বর্তমানে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি। আসন্ন শরৎকালীন বাজেটের আগে তিনি এমন একটি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন, যেখানে তাকে একসঙ্গে ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে, সরকারি অর্থনীতি দৃঢ় রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে যে তার নীতিগুলো নিরাপদ ও কার্যকর।

অর্থমন্ত্রী নিজস্ব আর্থিক নীতি এবং শৃঙ্খলার উপর নির্ভর করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা খুঁজছেন, যার মাধ্যমে তিনি পাবলিক ফাইন্যান্সে বহু বিলিয়ন পাউন্ডের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। বাজেট ঘোষণা পর্যন্ত সময় সীমিত, তাই তার সামনে মূল দুটি বিকল্প রয়েছে — ব্যয় কাটছাঁট করা অথবা কর বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, অথবা এই দুইয়ের সংমিশ্রণ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি কর বৃদ্ধির বিকল্পগুলোও বিবেচনা করছেন। এতে থাকতে পারে লভ্যাংশে কর আরোপ, বেতন-সক্রিফাইস স্কিমের কর ছাড় কমানো এবং নির্দিষ্ট পেশার উপর উচ্চ কর চাপানো। তবে কর বৃদ্ধি জনমত জন্য খুবই অপ্রিয়। একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় প্রতি তৃতীয় ব্রিটিশ নাগরিক মনে করেন যে অর্থমন্ত্রীকে কর বৃদ্ধি এড়াতে হবে, এমনকি যদি এর ফলে ব্যয় কমানো বা ঋণ বৃদ্ধি করতে হয়।

তবে কিছু বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে কর বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময় গিল্ট মার্কেটে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করেছেন যে আয়কর বৃদ্ধি বাতিল করলে বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজেটে কর বৃদ্ধির ঘোষণা ব্রিটিশ সরকারী বন্ডের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে।

অর্থমন্ত্রীকে বাজেটে ব্যয় কাটা নিয়েও সমন্বয় করতে হবে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, কর বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যয় কমানোও জরুরি, যাতে রাষ্ট্রীয় ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে অতিরিক্ত ব্যয় কাটছাঁট রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যবামপন্থী আইনপ্রণেতাদের জন্য, যারা পূর্বে সরকারের কল্যাণমূলক খাতের কাটছাঁটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দেখিয়েছিলেন।

অন্য একটি বিকল্প হলো, অর্থমন্ত্রী তার নিজস্ব আর্থিক নীতি ভঙ্গ করতে পারেন। তার নীতি অনুযায়ী, দৈনন্দিন ব্যয় কর আয়ের দ্বারা পূরণ করতে হবে এবং ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে সরকারি ঋণ অর্থনৈতিক উৎপাদনের অংশ হিসাবে কমতে হবে। তবে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি পুনরায় বলেছেন যে এই নীতি তার জন্য “অটল”। যদি নীতি ভঙ্গ করা হয়, তবে গিল্ট মার্কেটে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

গিল্টের বাজারে বিনিয়োগের মূল কারণ হলো সরকারি ঋণের উপর সুদের হার। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সরকারি ঋণের খরচ G-7 দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৩০ বছরের গিল্টের সুদের হার ৫% এর ওপরে, যা বহু দশক ধরে উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। উচ্চ সুদের হার অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন মর্টগেজ, বিনিয়োগের ফলাফল এবং ব্যক্তিগত ঋণ।

অর্থমন্ত্রীর সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হলো বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে কর বৃদ্ধি, ব্যয় কাটা এবং বাজারের প্রত্যাশা সব মিলিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখা। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন বাজেট “বাজার-বান্ধব” হবে, অর্থাৎ সরকারি আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে বাজেটে উল্লেখযোগ্য ব্যয় কমানো হয়তো সম্ভব নয়।

যথাযথ পরিকল্পনা এবং বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীকে ভোটার, সরকারি তহবিল এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই কঠিন ভারসাম্য বজায় রাখাই তার বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments