খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ব্যস্ত বাণিজ্যকেন্দ্র মহালছড়ি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তেই পুড়ে গেছে ২৩টি দোকান। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে হঠাৎ লাগা এ আগুন বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক উপায়েই আগুন নিভে যায় — হঠাৎ নেমে আসা প্রবল বৃষ্টির জলে।
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, আগুন লাগার উৎস ছিল বাজারের মসজিদের সামনের একটি দোকান। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। বাজারের অধিকাংশ দোকান ছিল কাঠ ও টিনের তৈরি, যা আগুনের বিস্তার আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু সময়ের মধ্যেই পুরো সারির দোকানগুলো জ্বলতে শুরু করে।
ঘটনার প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু পানির উৎস না থাকায় তারা কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাজুড়ে দেখা দেয় প্রচণ্ড গরম আর ধোঁয়া। ঠিক তখনই আকাশ ভারী হয়ে নামে বৃষ্টি, আর তাতেই আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলেন।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ১২টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ইউনিটগুলো মহালছড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রায় দেড়টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু পানির তীব্র সংকটে কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাটিরাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে এক হাজার লিটারের পানির ট্যাংকার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে এর আগেই প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ বৃষ্টির জলেই আগুন অনেকটা নিভে যায়।
আগুন লাগার সময় বাজারের প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। এদিকে বজ্রপাত ও প্রবল বাতাসের কারণে তখন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে কেউ ঠিকভাবে আগুনের উৎস দেখতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বজ্রপাত থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। দোকানগুলো কাঁচা ও অস্থায়ী কাঠামোর হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সবকিছু পুড়ে যায়।
আগুনে জুতার দোকান, মুদি দোকান, কাপড়ের দোকান, কসমেটিকস, খাবারের হোটেল এবং সোনার দোকানসহ মোট ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে অনেক পরিবার এক রাতেই সব হারিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ বেশ বড়।
এই অগ্নিকাণ্ড স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে পাহাড়ি অঞ্চলের ছোট শহরগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের পানির উৎসের ঘাটতি ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার প্রশ্ন। যদি সময়মতো পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকত, হয়তো ক্ষয়ক্ষতি এতটা ভয়াবহ হতো না।
বৃষ্টির অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনই শেষ পর্যন্ত বড় বিপর্যয় ঠেকায়। তবে ২৩টি দোকান হারানোর ব্যথা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখন সরকারি সহায়তার প্রত্যাশায় আছেন।



