Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeলেখক কথোপকথনবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যকর্ম: মানবসভ্যতার মূল্যবান দলিল

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যকর্ম: মানবসভ্যতার মূল্যবান দলিল

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস ও কল্পনাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করেছে। প্রথমে এ চেষ্টা ছিল মৌখিক, যার ফলে জন্ম নিয়েছে লোককথা, কবিতা, আখ্যান, শ্লোক এবং মিথ। লিপি আবিষ্কারের পর মানুষের সাহিত্যচর্চা নতুন মাত্রা পায়। নাটক, মহাকাব্য, ইতিহাস ও দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ রচনার প্রচলন শুরু হয়।

আজকের সময়ে আমরা যে গল্প, উপন্যাস বা নাটক পড়ি বা দেখি, তার শিকড় অনেক সময় হাজার বছরের পুরোনো সাহিত্যকর্মে নিহিত। এই প্রাচীন সাহিত্য আমাদের কেবল অতীত জানায় না; বরং এগুলোতে জীবন, মৃত্যু, দুঃখ, সুখ, মানব অস্তিত্ব ও পরলোকের মতো চিরায়ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। ফলে প্রাচীন সাহিত্য মানবজাতির সম্মিলিত আত্মজিজ্ঞাসার দলিল হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্বের কিছু প্রাচীন ও প্রভাবশালী সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

গিলগামেশের মহাকাব্য:
প্রায় চার হাজার বছর আগের এই মহাকাব্য আকাদীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল। এতে সুমেরীয় ছোট কবিতা ও গল্প থেকে গিলগামেশের জীবনী রচিত হয়েছে। বিভিন্ন রচয়িতার হাতে ধাপে ধাপে মহাকাব্যটি তৈরি হয়েছিল। গবেষকরা মনে করেন, গিলগামেশ নামের সত্যিকারের রাজা খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে উরুক নগরের রাজা ছিলেন। মহাকাব্যটি প্রথমে রাজকীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ছিল, যা পরে ধ্বংস হলেও উনিশ শতকে কিছু মাটির ফলক উদ্ধার করা হয়।

টেল অব দ্য শিপরেকড সেইলর:
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে মিসরীয় হিয়েরাটিক লিপিতে লেখা এই গল্প প্রাচীন মিসরের সংরক্ষিত সাহিত্য। এতে অতিপ্রাকৃত উপাদান বিদ্যমান। গল্পের কিছু অংশ আধুনিক পাঠকের কাছে মাঝখান থেকে শুরু মনে হতে পারে, তবে এটি প্রাচীন মিসরীয় কাহিনির স্বাভাবিক শৈলী অনুযায়ী সম্পূর্ণ ধরা হয়।

দ্য বুক অব জোব:
এই গ্রন্থে একজন ধার্মিক ব্যক্তির দুর্ভোগ ও ঈশ্বরের ন্যায়ের পরীক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। জোব তার সম্পদ, সন্তান ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি সহ্য করেন। লেখকের পরিচয় স্পষ্ট নয়; কেউ কেউ প্রাচীন ধর্মীয় ব্যক্তির নাম ধরে থাকলেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

কোড অব হাম্মুরাবি:
প্রাচীন ব্যাবিলনের এই আইনসংহিতা আকাদীয় ভাষায় খোদাই করা স্তম্ভে সংরক্ষিত ছিল। সমাজে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হাম্মুরাবি আইন প্রণয়ন করেছিলেন। এতে সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হতো।

দ্য বুক অব দ্য ডেড:
প্রাচীন মিসরের ধর্মীয় গ্রন্থ যা মৃত ব্যক্তিকে পরলোকের নিরাপদ যাত্রায় সাহায্য করার উদ্দেশ্যে লেখা। এটি বিভিন্ন প্যাপিরাস শিটে সংরক্ষিত ছিল এবং কফিন বা কবরস্থানে রাখা হতো।

বেদ:
প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার জ্ঞানের ভান্ডার বেদ শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থ নয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থে স্তোত্র, যজ্ঞবিধি, প্রার্থনা ও দৈনন্দিন জীবনের মন্ত্র অন্তর্ভুক্ত। বেদের চারটি অংশ: সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।

দ্য ওডিসি:
গ্রিক কবি হোমারের মহাকাব্য। ট্রয় যুদ্ধের পর বীর ওডিসিউসের ১০ বছরের যাত্রা, রাজ্যে ও পরিবারে ফিরে আসার কাহিনি এতে বর্ণিত। এতে নাটকীয়তা ও বীরত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে।

মিদিয়া:
গ্রিক নাট্যকারের ট্র্যাজেডি, যেখানে নারীর ক্ষমতা ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ প্রতিফলিত। মিদিয়া চরিত্র শক্তিশালী এবং সামাজিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে এক নারী কিভাবে ক্ষমতাবান পুরুষের সঙ্গে লড়াই করে তা এই নাটকে ফুটে উঠেছে।

দ্য সিম্পোজিয়াম:
প্রাচীন গ্রিসে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা মিলনমেলায় মিলিত হতেন, কবিতা আবৃত্তি ও দার্শনিক আলোচনা করতেন। প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সিম্পোজিয়াম’-এ এমন এক বৌদ্ধিক মিলনমেলার চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে যুবক সক্রেটিস ও অন্যান্য শিষ্যের মধ্যে বিতর্ক প্রদর্শিত হয়েছে।

দ্য টেল অব গেঞ্জি:
প্রথম উপন্যাস হিসেবে পরিচিত এই গ্রন্থ প্রায় খ্রিষ্টাব্দ ১০০০ সালে লেখা। প্রাচীন জাপানের রাজপুত্র হিকারু গেঞ্জিকে কেন্দ্র করে এর গল্প। এতে রাজদরবারের জীবন, প্রেম, দুঃখ-কষ্ট এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বর্ণনা রয়েছে।

প্রাচীন এই সাহিত্যকর্মগুলো আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানবতার চিরন্তন প্রশ্নের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে, যা আজও সমসাময়িক পাঠকের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments