Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeখেলার জগৎবিশ্বকাপে খেলার পথে কুরাসাও: ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দল

বিশ্বকাপে খেলার পথে কুরাসাও: ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দল

বিশ্বকাপ ফুটবলে কখনো কখনো সবচেয়ে ছোট দেশগুলোই সবচেয়ে বড় চমক তৈরি করে। ২০১৮ সালে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে আইসল্যান্ড বিশ্বকাপে পৌঁছে বিশ্বকে অবাক করেছিল। এরপর সম্প্রতি কেপ ভার্দে তাদের জনসংখ্যার মাত্র ৫ লাখ ২৫ হাজার থাকা সত্ত্বেও বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। এবার সেই ধারায় কুরাসাও নামের ছোট্ট দেশটি ইতিহাস গড়ার পথে এগোচ্ছে।

কনক্যাকাফ অঞ্চলের এই দেশটি যদি চূড়ান্তভাবে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারে, তবে কুরাসাও হয়ে যাবে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ যেটি কখনো ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে খেলেছে। কুরাসাওয়ের জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার এবং আয়তন মাত্র ৪৪৪ বর্গকিলোমিটার। এর আগে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে কেপ ভার্দে (৪০০০ বর্গকিলোমিটার) এই সম্মান লাভ করেছিল।

গতকাল শুক্রবার কুরাসাও হ্যামিল্টনে বারমুডার বিপক্ষে ৭-০ গোলে জয়ী হয়েছে। এই জয়ে দলটি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত টিকিটের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে। ১৯ নভেম্বর বুধবার জ্যামাইকার বিপক্ষে কেবল একটি ড্র পেলেই কুরাসাও নিশ্চিত করবে তাদের ইতিহাস গড়ার অধিকার।

কুরাসাওয়ের খেলা আন্তর্জাতিক মানের আলোচনায় এসেছে আগেও। ২০২৩ সালের মার্চে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল তারা। যদিও সেই ম্যাচে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনাকে ৭-০ গোলে হার মানাতে হয়েছিল, তারপরও দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করে। এবার তারা ইতিহাস গড়ার মুখোমুখি।

ভৌগোলিকভাবে কুরাসাও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ঠিক উত্তরে, ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত। যদিও এটি দক্ষিণ আমেরিকার কাছাকাছি, তারা কনক্যাকাফ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কুরাসাও মূলত দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, একটি হলো কুরাসাও মূল দ্বীপ এবং অন্যটি জনবসতিহীন ‘লিটল কুরাসাও’।

ইতিহাস অনুযায়ী, কুরাসাও ১৮১৫ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত কুরাসাও অ্যান্ড ডিপেনডিন্সিস কলোনির অংশ ছিল। ১৯৫৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এটি নেদারল্যান্ডস এন্টিলিসের অংশ হিসেবে রইল। ২০১০ সালের অক্টোবরে নেদারল্যান্ডস এন্টিলিস বিলুপ্ত হওয়ার পর কুরাসাও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্তমানে এটি কিংডম অব নেদারল্যান্ডসের অন্তর্গত স্বায়ত্তশাসিত একটি দেশ, যেখানে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি প্রধানত নেদারল্যান্ডসের নিয়ন্ত্রণে থাকে। স্থানীয় ভাষা হলো ডাচ, ইংরেজি এবং পাপিয়ামেন্টো।

কুরাসাওকে বিশ্বকাপের প্রান্তে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কোচ ডিক অ্যাডভোকাট। তিনি এর আগে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দল, বেলজিয়াম রেঞ্জার্স ও সান্ডারল্যান্ডের মতো ক্লাবের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। জনসংখ্যা কম হলেও কুরাসাও দলে রয়েছে উচ্চমানের ফুটবলার। উদাহরণস্বরূপ, বারমুডার বিপক্ষে দুই গোল করা জর্ডি পাউলিনা খেলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে।

কুরাসাও বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা শুধু দেশের ফুটবলের ইতিহাস নয়, বরং ছোট দেশের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশের এক নজির স্থাপন করবে। এভাবে তারা প্রমাণ করবে যে সাইজ নয়, দক্ষতা এবং মনোবলই ফুটবলের সত্যিকারের শক্তি। কুরাসাওয়ের ভ্রমণ এবং প্রস্তুতি ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments