Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনবিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষায় বাজেট কাটছাঁটের ধাক্কা

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষায় বাজেট কাটছাঁটের ধাক্কা

দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ হঠাৎ করেই বিশেষ শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশজুড়ে হাজার হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার চরম উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন।

ইলিনয়ের এক শিক্ষক জানান, তিনি পুরো রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে ঘুরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ান। মাসে প্রায় ১,৪০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে হয় তাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি সরবরাহ থেকে শুরু করে শিক্ষক ও ছাত্রদের সেগুলোর ব্যবহার শেখানো—সব দায়িত্ব তার কাঁধে। কাজের মানোন্নয়নে তিনি সম্প্রতি অনলাইন ব্রেইল প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎই জানা গেল, এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের তহবিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা বিভাগ শুক্রবার অফিস বন্ধের পর এক ঘোষণায় জানায়, আগামী তিন বছরে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের বিশেষ শিক্ষা অনুদান বাতিল করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় গৃহীত উদ্যোগ।

ব্রেইল প্রশিক্ষণসহ তিনটি প্রকল্প, শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য দোভাষী তৈরি কর্মসূচি, এবং চারটি রাজ্যভিত্তিক ডেফ-ব্লাইন্ড প্রকল্পের অনুদানও বাতিল করা হয়েছে। ফলে এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা সেবার ধারাবাহিকতা প্রশ্নের মুখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফেডারেল তহবিল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৭ কোটি ৩০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ৩ লাখ শ্রবণ প্রতিবন্ধী, এবং প্রায় ১১ হাজার ডেফ-ব্লাইন্ড শিশু রয়েছে—এরা সবাই বিশেষ শিক্ষার আওতায় আসে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এমনিতেই দক্ষ শিক্ষকের সংকট বিদ্যমান। অনেক শিক্ষককে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী সামলাতে হয়। আলাস্কা, অ্যারিজোনা, ও ইন্ডিয়ানার মতো অঙ্গরাজ্যে এই বছরই বাজেট কাটছাঁটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেফ ও ব্লাইন্ড শিক্ষার্থীদের স্কুলগুলো।

ফেডারেল অনুদান বাতিলের পেছনে প্রশাসনের দাবি—এইসব প্রকল্পে নীতি ও কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও মেধাভিত্তিকতার অভাব রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কর্মক্ষমতা বা সফলতা নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়নি।

অন্যদিকে, একাধিক রাজ্যের ডেফ-ব্লাইন্ড কেন্দ্রগুলোও তহবিল হারানোর পথে। এসব কেন্দ্র শিশুদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়, যেমন—বিশেষ শিক্ষণ সামগ্রী, চিকিৎসা পরামর্শে সহযোগিতা, এবং সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন। অনেক পরিবার এই কেন্দ্রগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

ম্যাসাচুসেটসের এক মা জানান, তার সন্তান দৃষ্টি ও শ্রবণ—দুই প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠছে। স্থানীয় ডেফ-ব্লাইন্ড কেন্দ্রের সহায়তায় তিনি সন্তানকে উপযুক্ত যত্ন দিতে পারছেন। কিন্তু এখন সেই কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্তে চারটি রাজ্যের প্রকল্প এবং ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে সামান্য আশার খবরও আছে। শিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি কিছু তহবিল জাতীয় ডেফ-ব্লাইন্ড সেন্টারে পুনর্বিন্যস্ত করেছে, যার অধীনে বাতিল হওয়া রাজ্যভিত্তিক কেন্দ্রগুলো অস্থায়ীভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে পরবর্তী অর্থবছরে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে।

তবুও উদ্বেগ রয়ে গেছে। কারণ, ব্রেইল প্রশিক্ষণ বা দোভাষী তৈরির প্রকল্পগুলো নতুন তহবিল পাবে কিনা, তা অনিশ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকগুলোই বিকল্প উৎস না পেলে এই গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।

এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি প্রশিক্ষিত শিক্ষক না পায়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে উঠবে?”

এই পরিস্থিতি শুধু আর্থিক নয়, মানবিক দিক থেকেও গভীর উদ্বেগের। যুক্তরাষ্ট্রে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নীরব বিপর্যয় শুরু হয়েছে, তার প্রভাব হয়তো দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments