উত্তর কোরিয়ায় নাগরিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এখন এক ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। নতুন এক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদেশি চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজ ভাগাভাগি করার মতো কর্মকাণ্ডের কারণে দেশটিতে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। গত এক দশকে সেখানে তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ ভয়াবহভাবে সীমিত হয়ে গেছে।
১৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উত্তর কোরিয়া মূলত একটি সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণবাদী রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। প্রায় ২৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। নতুন আইন অনুযায়ী এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিসর বাড়ানো হয়েছে এবং বাস্তবায়নও আরও বেশি হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের পর দেশত্যাগ করা ৩১৪ জন ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে ব্যবহার করে সরকার সেখানে নজরদারির পরিধি বাড়িয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি সপ্তাহে আত্মসমালোচনার বৈঠকে অংশ নিতে হয়, যা আসলে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ ও মতাদর্শগতভাবে প্রভাবিত করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিদেশি তথ্য, গান, সিনেমা কিংবা বইয়ের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় নাটক কিংবা বিদেশি গান-বই প্রচারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই দমননীতি ২০২0 সালের পর আরও কঠোর রূপ নিয়েছে। প্রকাশ্যে বিচার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিতে এবং প্রতিবাদ দমন করতে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই নজরদারি আসলে মানুষের “চোখ-কান বন্ধ করার” চেষ্টা। সরকার এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, সামান্য অসন্তোষ বা অভিযোগের কোনো সুযোগই রাখা হয় না।
দেশটিতে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার কার্যত নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র সরকার পরিচালিত একটি অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক আছে, যা মূলত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। নতুন আইনে বিদেশি তথ্য গ্রহণ বা প্রচারকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এমনকি সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ভাষা ব্যবহারকেও অপরাধ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এসব অপরাধে কঠোর শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হচ্ছে।
তবে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার জনগণ এখনো নিষিদ্ধ তথ্য সংগ্রহ ও ভোগ করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।