Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনবিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতের রায়, প্রশাসনের নীতির কড়া সমালোচনা

বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতের রায়, প্রশাসনের নীতির কড়া সমালোচনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তির স্বাধীনতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে ফেডারেল আদালত। মঙ্গলবার ঘোষিত এ রায়ে আদালত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও সমানভাবে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার ভোগ করেন, যা আমেরিকান নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আদালতের বিচারপতি এক দীর্ঘ রায়ে বর্তমান প্রশাসনের নীতি ও পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর একযোগে এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল যাতে করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করা যায়।

রায়ের শুরুর অংশে বিচারপতি নিজের প্রতি আসা হুমকির কথাও প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি পোস্টকার্ডে তাঁকে হুমকি দিয়ে লিখেছে: “প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমা ও ট্যাঙ্ক আছে… আপনার কী আছে?” এর জবাবে বিচারপতি রায়ের শুরুতেই লেখেন: “আমার কাছে শুধু কর্তব্যবোধই আছে।”

মোট ১৬১ পৃষ্ঠার রায়ের শেষাংশে বিচারপতি স্পষ্ট ভাষায় বর্তমান প্রশাসনের কর্মকাণ্ডকে আক্রমণাত্মক, প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং আইনবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট এমনভাবে আচরণ করছেন যেন সংবিধান, নাগরিক আইন, নিয়মকানুন ও সামাজিক রীতিনীতির কোনো মূল্য নেই।

রায়ে আরও বলা হয়, প্রেসিডেন্টের এই ভুল ধারণা যে, তাঁর অপছন্দের বক্তব্যের কারণে সরকার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে—এটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি।

মামলাটি দায়ের করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি সংগঠন এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শিক্ষাবিদদের একটি অ্যাসোসিয়েশন। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের কারণে একটি পরিকল্পিত নীতির মাধ্যমে দেশ থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রথম সংশোধনীর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

বিচার চলাকালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে, যেসব শিক্ষার্থীর নাম বহিষ্কারের তালিকায় এসেছে তাদের অধিকাংশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে একটি বেনামী ওয়েবসাইট থেকে। ওই ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদেরকে ফিলিস্তিনপন্থী বা ইসরায়েলবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকও করা হয়েছিল।

এ রায়ের বিষয়ে মতপ্রকাশ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক একটি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেন, যদি প্রথম সংশোধনী কোনো অর্থ বহন করে, তবে সরকার কেবল রাজনৈতিক মতের অমিলের কারণে কাউকে বন্দি করতে পারে না।

অন্যদিকে, বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানিয়ে দেন, বিদেশি নাগরিকদের যদি সন্ত্রাসবাদপন্থী বা সহিংস কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার প্রমাণ মেলে তবে তাদের ভিসা বাতিল করা অব্যাহত থাকবে।

এর আগে এই একই বিচারপতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুদান বন্ধের একটি উদ্যোগকে আটকে দিয়েছিলেন, যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে। একইভাবে স্বাস্থ্য গবেষণার অনুদান কমানোর পদক্ষেপও তিনি আটকে দিয়েছিলেন। এসব ঘটনায় বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার অভিযোগও তোলা হয়েছিল। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, তাঁর উদ্দেশ্য কখনোই সুপ্রিম কোর্টের অবাধ্য হওয়া নয়।

এ রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত মতপ্রকাশ ও গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি রক্ষায় আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments