বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথায় ভোগেন। দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট কাজ — যেমন জুতোর ফিতা বাঁধা বা নিচু হয়ে কিছু তোলা — অনেকের জন্যই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, প্রায় ৬১৯ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। তবে সুখবর হলো, বসে বসেই করা যায় এমন একটি সহজ ব্যায়াম “সিটেড সালসা” যা কোমরের ব্যথা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যায়ামের সবচেয়ে ভালো দিক হলো — এতে আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হয় না। বসা অবস্থায় করলেই এটি মেরুদণ্ডের নিচের অংশে আরাম দেয়।
কোমরের নিচের অংশের ব্যথা বা লোয়ার ব্যাক পেইন বিশ্বব্যাপী অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। সাধারণত এটি পাঁজরের নিচের দিক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত অঞ্চলে অনুভূত হয়। এই সমস্যা যেকোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে, তবে অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান কিংবা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি অনেক বেশি।
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মেরুদণ্ড ৩৩টি কশেরুকা নিয়ে গঠিত, যার প্রতিটির মাঝে থাকে একধরনের নরম তরুণাস্থি, যাকে বলা হয় ডিস্ক। এই ডিস্কগুলো ঝাঁকুনি শোষণ করে, হাঁটা–দৌড়ানো–ঝাঁপানোর সময় ভারসাম্য রক্ষা করে।
সবচেয়ে বেশি ব্যথা সাধারণত নিচের দুইটি কশেরুকায় হয়, যা পেলভিস বা শ্রোণির সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে। এর ফলে শরীরের ওজন ধরে রাখতে পারে, কিন্তু এর একটি অসুবিধাও রয়েছে—এটি অনেক সময় শক্ত ও অচল হয়ে পড়ে। বিশেষত ব্যথার কারণে আশপাশের পেশি টান ধরলে সেই অংশ আর নড়াচড়া করতে পারে না।
এই অবস্থায় শরীরের নীচের অংশে হালকা নড়াচড়া ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেলভিস বা কোমরের অংশকে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ঘোরানোর মাধ্যমে নিচের মেরুদণ্ড স্বাভাবিকভাবে নড়ে। হাঁটার সময় শরীর এই নড়াচড়াই করে, কিন্তু কোমর ব্যথার সময় পেশি শক্ত হয়ে গেলে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যথা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি হলো—নড়াচড়া বজায় রাখা। নিয়মিত কিছু ব্যায়াম, স্ট্রেচ বা থেরাপির মাধ্যমে ব্যথার জায়গায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে পুনরুদ্ধার দ্রুত হয়।
এক্ষেত্রে “সিটেড সালসা” দারুণ উপকারী হতে পারে। এটি করতে যা করতে হবে—
চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন, পা মাটিতে শক্তভাবে রাখুন, উভয় পা একসাথে রাখুন যাতে উরুগুলো সমান্তরাল থাকে। এবার ডান হাঁটু সামান্য সামনে ঠেলুন এবং বাম হাঁটু টানুন পেছনে। তারপর পাল্টে নিন—বাম হাঁটু সামনে, ডান হাঁটু পেছনে।
এই সময় কাঁধ একদম স্থির রাখবেন। পেলভিস এক পাশ থেকে অন্য পাশে দোল খাবে, যেন আপনি সালসা নাচছেন। এক মিনিট এভাবে চালিয়ে যান।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মাত্র এক মিনিটের “সিটেড সালসা” ব্যায়াম প্রতি ৩০ মিনিট পরপর করলে পেশির টান কমে যায় এবং ব্যথা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এই ব্যায়ামের সবচেয়ে ভালো দিক হলো—এটি অফিসের ডেস্কে বসে করাই যায়।
অফিসে কাজের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়ানো বা হাঁটাচলা করাই উত্তম, কিন্তু ব্যস্ত সময় বা মিটিংয়ের মাঝে সেটা সম্ভব হয় না অনেক সময়। সেই সময় এক মিনিটের “সিটেড সালসা” ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে।
এছাড়া, এটি বিশেষভাবে উপকারী বয়স্কদের জন্য, যারা সহজে দাঁড়াতে বা বসতে পারেন না, কিংবা যাদের অপারেশনের পর চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেন, নিয়মিত নড়াচড়া ও হালকা ব্যায়াম দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। যারা শারীরিকভাবে খুব একটা সক্রিয় নন, তাদের জন্য বসে বসেই করা এই ব্যায়াম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
দিনে কয়েক মিনিট “সিটেড সালসা” অভ্যাসে পরিণত করলে কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব — ঘরে, অফিসে বা যেকোনো জায়গায় বসেই।



