বদরুদ্দীন উমর (২০ ডিসেম্বর ১৯৩১ – ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ছিলেন বাংলাদেশি লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান শহরে। তাঁর পিতা আবুল হাশিম এবং মাতা মাহমুদা আখতার মেহেরবানু বেগম।
শিক্ষাজীবন শুরু হয় বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে, যেখানে ১৯৪৮ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিপিই (ফিলোসফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স) ডিগ্রি লাভ করেন।
বদরুদ্দীন উমরের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। ১৯৬৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘সংস্কৃতি’ নামে একটি রাজনৈতিক সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং পরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বদরুদ্দীন উমরের রচিত প্রবন্ধ ও গবেষণা সাহিত্য গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক। তার গুরুত্বপূর্ণ বইগুলির মধ্যে রয়েছে – সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৮), পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (১ম খণ্ড ১৯৭০, ২য় খণ্ড ১৯৭৬, ৩য় খণ্ড ১৯৮১), চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক (১৯৭২), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ (১৯৭৩), বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা (১৯৭৪), যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ (১৯৭৪), যুদ্ধ পূর্ব বাঙলাদেশ (১৯৭৬), ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮০), বাঙলাদেশে মার্কসবাদ (১৯৮১), আমাদের ভাষার লড়াই (১৯৮১), বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাজনীতির চালচিত্র (১৯৮২) এবং আরও অনেক প্রবন্ধ ও বই।
তার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৪ সালে ইতিহাস পরিষদ পুরস্কারও প্রত্যাখ্যান করেন। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে, যা তিনি পুনরায় প্রত্যাখ্যান করেন।
বদরুদ্দীন উমরের জীবন এবং সাহিত্যকর্ম একদিকে শিক্ষাগত, অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রেখেছে। তাঁর গ্রন্থসমূহ আজও সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং রাজনৈতিক দর্শনের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য মূল্যবান রেফারেন্স।