মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘদিনের উত্তপ্ত হাউজিং মার্কেট এখন নতুন চিত্র ধারণ করছে। একসময় যেখানে বিক্রেতাদের চাহিদাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো, সেখানে এখন ক্রেতাদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মায়ামি, অরল্যান্ডো, জ্যাকসনভিল ও টাম্পা—এই চারটি প্রধান শহরেই হাউজিং মার্কেট ক্রেতা-বান্ধব পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় ফ্লোরিডায় হাউজিং মার্কেট ছিল তুঙ্গে। বাইরের রাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে ভিড় জমায়, সূর্যালোক, তুলনামূলক কম দাম এবং খোলামেলা জায়গার প্রলোভনে। তখন বাড়ি বিক্রি হতো কয়েক দিনের মধ্যেই, অনেক সময় চাহিদার চেয়ে বেশি মূল্যে। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মন্থর হয়েছে, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, আর বাড়ি বিক্রি হতে সময় লাগছে আগের তুলনায় বেশি। ফলে বিক্রেতারা দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন, এমনকি অনেকে তালিকা থেকে বাড়ি সরিয়েও নিচ্ছেন।
জাতীয়ভাবে যেখানে গড় সরবরাহ পাঁচ মাসের মতো, সেখানে ফ্লোরিডার প্রধান শহরগুলো অনেকটাই এগিয়ে। মায়ামিতে সরবরাহ ৯.৭ মাস, অরল্যান্ডোতে ৭ মাস, আর জ্যাকসনভিল ও টাম্পায় ৬.৩ মাস। সাধারণত ছয় মাসের বেশি সরবরাহ থাকলে বাজারকে ক্রেতাবান্ধব ধরা হয়।
ফ্লোরিডা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক সক্রিয় হাউজিং লিস্টিংয়ের রেকর্ড করেছে—এক লাখ ৬৭ হাজারের বেশি সক্রিয় তালিকা। যা দেশের মোট সরবরাহের প্রায় ১৫ শতাংশ। তুলনায় টেক্সাসে আছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার আর ক্যালিফোর্নিয়ায় মাত্র ৭৭ হাজার।
শহরভেদে পরিস্থিতিও ভিন্ন রকম। মায়ামিতে ইনভেন্টরি আগের বছরের তুলনায় ২৪% বেড়েছে, বাড়ি বিক্রি হতে গড়পড়তা ১৬ দিন বেশি লাগছে। তবে মাত্র ১৭% বিক্রেতা দাম কমাতে রাজি হয়েছেন। অন্যদিকে, অরল্যান্ডোতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাড়ির দাম কমেছে। জ্যাকসনভিলে গড় লিস্টিং প্রাইস ২.৬% নেমে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ডলারে নেমেছে, এবং ৩০% এর কাছাকাছি বিক্রেতা দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন। টাম্পায়ও এক-চতুর্থাংশের বেশি বাড়ির দাম কমেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো বাজার ধস নয়, বরং একটি স্বাভাবিক ‘কুলডাউন’। ফ্লোরিডার অর্থনীতি এখনো শক্ত অবস্থানে আছে। রাজ্যের চারটি বড় শহরেই বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের নিচে। এর ফলে চাহিদা একেবারে কমে যায়নি। কঠোর ঋণ নীতি ও আর্থিকভাবে স্থিতিশীল পরিবারগুলো বাজারকে নিরাপদ রাখছে।
এখনকার ক্রেতাদের জন্য এটি বিরল সুযোগ। বেশি তালিকা মানে বেশি বিকল্প, দীর্ঘ সময় মানে কম প্রতিযোগিতা, আর দাম কমার প্রবণতা মানে ভালো দরকষাকষির সুযোগ। মহামারির সময়ের তীব্র দৌড়ঝাঁপ এখন আর নেই, বরং ক্রেতাদের হাতে ফিরে এসেছে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা।