সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ফোনালাপে বসেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। প্রায় ৩০ মিনিটের এই আলোচনা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে। ফোনালাপের সময় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা শাস্তিমূলক বাণিজ্য শুল্ক এবং দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই নেতার এই আলাপ ছিল উষ্ণ ও ইতিবাচক। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা চান দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ুক। প্রেসিডেন্ট আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী মাসে মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফোনালাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, কথোপকথনটি ছিল “খুবই ভালো”। তিনি জানান, ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আরও আলোচনা হবে এবং উভয় দেশেই শিগগিরই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে তিনি বৈঠকের সুনির্দিষ্ট সময় বা স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় দুই নেতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। সেই অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ “অগ্রহণযোগ্য”। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তখন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে “বিচারিক দুর্নীতি” ও “দমন-পীড়নের” অভিযোগ এনেছিলেন।
ব্রাজিল বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের এক সংবেদনশীল পর্যায়ে অবস্থান করছে। সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সাবেক প্রেসিডেন্টকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। সেই নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্টের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা ব্রাজিলের কূটনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়লে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ আমেরিকার বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে আগ্রহী। বিশেষ করে বাণিজ্য, জলবায়ু, এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। উভয় দেশই চায়, সম্পর্কের জটিলতা কাটিয়ে নতুন করে পারস্পরিক আস্থা তৈরি হোক।
এই ফোনালাপ তাই শুধু দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির দিক থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতের বৈঠকগুলোতে যদি শুল্ক প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা হ্রাসের বিষয়টি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র–ব্রাজিল সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।



