শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত শিক্ষা নীতির সঙ্গে একমত না হয়ে তারা সরকারি তহবিলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এভাবে এমআইটি প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের প্রস্তাবিত নীতিকে অগ্রাহ্য করল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে প্রশাসনের শিক্ষা-সংক্রান্ত এজেন্ডা বাস্তবায়নের শর্তে অতিরিক্ত সরকারি তহবিল প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে এমআইটির প্রেসিডেন্ট এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—এই প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের নেতৃত্ব টিকে আছে স্বাধীন চিন্তা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। তাই কোনো প্রকার সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবদ্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চেতনার পরিপন্থী। এমআইটির মতে, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রটি এমন হওয়া উচিত যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশাসনের প্রস্তাবিত কমপ্যাক্টে একাধিক শর্ত যুক্ত ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট বাথরুম ও ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, এবং আমেরিকান নাগরিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পাঁচ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখা। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে “আমেরিকান মূল্যবোধ ও মিত্রতার প্রতি সদ্ভাব” যাচাইয়ের কথাও বলা হয়।
এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আমেরিকান নাগরিক শিক্ষা প্রদান, এবং শুধুমাত্র অসাধারণ প্রতিভার ভিত্তিতে ভর্তি দেওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল প্রস্তাবে। পরিবর্তে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়—যেমন সরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার, হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণ, এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ।
এমআইটির প্রেসিডেন্ট চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই অনেক মানদণ্ড মেনে চলে। বিশ্ববিদ্যালয়টি যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে, যেখানে আর্থিক সামর্থ্যের অভাব কখনোই বাধা হয় না। এছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এমআইটির অন্যতম মূল মূল্যবোধ।
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, “আমরা এমন অনেক মতামত ও তথ্য শুনি যা আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে। তবু আমরা ভিন্ন মতের প্রতি সম্মান রেখে আলোচনা করি। তবে এই প্রস্তাবের মৌলিক ধারণা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে অসঙ্গত।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির মতে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অনুদান কেবল বৈজ্ঞানিক যোগ্যতা ও গবেষণার মানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। রাজনৈতিক বা সামাজিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে নয়।
অন্যদিকে, একই প্রস্তাব পাওয়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়—যেমন ভ্যান্ডারবিল্ট, পেনসিলভানিয়া, ডার্টমাউথ, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, অ্যারিজোনা, ব্রাউন ও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়—এখনও প্রস্তাবটি পর্যালোচনায় রেখেছে। এর মধ্যে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে এমআইটির সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা জগতে একটি নৈতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাধীনতা ও গবেষণার নিরপেক্ষতা রক্ষায় এই অবস্থান ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দেবে।



