Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ফিফা প্রেসিডেন্টের নতুন ‘শান্তি পুরস্কার’: দায়িত্বে ফেরা দরকার ইনফান্তিনোর

ফিফা প্রেসিডেন্টের নতুন ‘শান্তি পুরস্কার’: দায়িত্বে ফেরা দরকার ইনফান্তিনোর

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সভাপতি সম্প্রতি আবারও আলোচনায়। তবে এবার ফুটবল নয়, রাজনীতি এবং আত্মপ্রচারমূলক কর্মকাণ্ড নিয়েই বিতর্কে তিনি। শর্ম আল শেখে আয়োজিত গাজা শান্তি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি ছুড়েছিলেন ফিফা প্রধান। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “এখন আমরা সত্যিই নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারি — একসাথে থাকার, শান্তির অধ্যায়।”

এই ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই ফিফা ঘোষণা করেছে নিজেদের বার্ষিক ‘শান্তি পুরস্কার’। আগামী মাসে ওয়াশিংটনে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে হয়েছে, এই উদ্যোগের পেছনে প্রেসিডেন্টের প্রতি ফিফা সভাপতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই বড় ভূমিকা রেখেছে। কারণ, তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে “উইনার” ও “ঘনিষ্ঠ বন্ধু” বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ফিফা প্রধান এক ব্যবসায়ী ফোরামে বলেন, “আমাদের সবাইকে তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা উচিত, কারণ এটি ভালো ফল দিচ্ছে।” কিন্তু বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরা মনে করছেন, তিনি যদি রাজনৈতিক যোগাযোগে কম সময় ব্যয় করে নিজের মূল দায়িত্বে ফিরে আসতেন, তাহলে খেলাটির উন্নতি আরও সঠিক পথে এগোতো।

ফিফার সমালোচকরা মনে করছেন, বর্তমান নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য এখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুনাফা। একজন ক্রীড়া বিশ্লেষক সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “ফিফা এখন এমন এক সংস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা খেলাকে পণ্য বানিয়ে সর্বোচ্চ আয় করতে চায়, তার জন্য খেলোয়াড় ও দর্শকদের ক্ষতিও তারা পরোয়া করছে না।”

আগামী গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পুরুষদের বিশ্বকাপকে ঘিরে এই সমালোচনা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো মিলিতভাবে আয়োজিত এই বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির নীতি অনেকের মধ্যেই ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

ফিফা এবার প্রথমবারের মতো ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ বা পরিবর্তনশীল টিকিট মূল্য প্রবর্তন করেছে, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী দাম বাড়তে থাকবে। ফলে একটি পরিবারের ম্যাচ দেখতে খরচ হতে পারে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত। এমনকি গ্রুপ পর্বের ম্যাচের জন্যও সাশ্রয়ী টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আর সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলো— পুনর্বিক্রয়ের ওপর আর কোনো সীমা নেই। এর ফলে ২,০৩০ ডলারের ফাইনাল টিকিট পরদিনই ২৫,০০০ ডলারে পুনরায় বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত হয়। আর সেই বাড়তি মূল্য থেকেও ফিফা কমিশন নিচ্ছে।

ফিফা সভাপতির নেতৃত্বে সংস্থাটি এখন অর্থশালী দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত কাতার ও সৌদি আরবের মতো ধনী রাষ্ট্রগুলো ফিফার বিশেষ সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছে। সৌদি আরবকেই ইতোমধ্যে ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত আয়ের আশায় ফিফা এখন ক্লাব বিশ্বকাপকেও বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ফুটবল ক্যালেন্ডার ক্রমশ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রবণতা খেলাটিকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে— যা ফুটবলের মূল দর্শনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র, যিনি ফুটবলের ভক্ত হিসেবেও পরিচিত, “গেম ওভার গ্রীড” নামে একটি পিটিশন শুরু করেছেন। এতে তিনি টিকিটের মূল্যনীতিকে “খেলার প্রতি অবমাননা” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য টিকিট সংরক্ষণের দাবি জানান। তবে তাঁর এই উদ্যোগও সফল হয়নি। সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান ফিফা নেতৃত্ব অর্থের ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা শুনতে চায় না।

বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার প্রধান যদি সত্যিই খেলাটির উন্নয়নে আগ্রহী হন, তবে তাঁকে রাজনীতি থেকে সরে এসে ফুটবলকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments