সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে তাঁর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানেরা এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পুরো আয়োজনটি ছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও প্রথা অনুসরণ করে। শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপিল বিভাগের এই বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতির উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি গত বছরের ১১ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। অবসরের বয়সসীমা অনুযায়ী শনিবার তিনি দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির জন্ম ১৯৬১ সালের ১৮ মে। সে হিসেবে ২০২৮ সালের ১৭ মে তাঁর বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। অর্থাৎ বর্তমান দায়িত্বকাল ধরে প্রায় আড়াই বছর পর তিনি অবসরে যাবেন। এই সময়কালে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নানা সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয় তাঁর নেতৃত্বে নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে।
শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে যান এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। দেশে ও বিদেশে আইনের বিভিন্ন শাখায় তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা বিচারক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।
পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৮৫ সালে জজকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন। এরপর ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আইনজীবী হিসেবে বিচারালয়ে কাজ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তাঁকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০০৫ সালে তাঁর নিয়োগ স্থায়ী হয়।
দীর্ঘ বিচারিক অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতায় তিনি ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে শপথ নেন। আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রায় ও আদেশে তাঁর ভূমিকা আইন অঙ্গনে আলোচিত হয়। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তাঁকে দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং কার্যকারিতা আরও জোরদার করার প্রত্যাশা রয়েছে। নতুন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও আস্থার পরিবেশ আরও শক্তিশালী হবে বলে আইন সংশ্লিষ্ট মহল আশা প্রকাশ করছে।



