পেরুর সুপে উপত্যকার মরুভূমিতে ৩,৮০০ বছরের পুরনো একটি শহরের সন্ধান মিলেছে, যা আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতার ধারণাকে পুরোপুরি নতুনভাবে উপস্থাপন করছে। শহরটির নাম পেনিকো এবং এটি কারাল সভ্যতার অন্তর্গত। এই শহরে ১৮টি স্থাপনা খোঁজা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় মন্দির ও আবাসিক সংরক্ষণাগার।
অভিযান থেকে জানা গেছে, কারালরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ও সহিংসতার আশ্রয় নেননি, বরং পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার পথ বেছে নিয়েছিল। শহরটিতে অস্ত্র বা প্রতিরক্ষা প্রাচীরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ৩,০০০ বছর আগে এই সভ্যতার প্রধান বসতি কারাল-সুপে ছিল বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং অত্যাধুনিক নগর।
কারালরা সুপে উপত্যকার মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আন্দিজ উপত্যকা এবং আমাজনের দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় চালাত। তারা তুলা, মিষ্টি আলু, স্কোয়াশ, ফলমূল ও মরিচ চাষ করত এবং পাহাড় থেকে খনিজ, আমাজন থেকে বানর ও মাকাও পাখি সংগ্রহ করত। এভাবেই তারা দীর্ঘ দূরত্বের মানুষদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।
পেনিকো শহরটি নদীর পাশে, পাহাড়ের গলিত জলসূত্রের কাছে তৈরি হয়েছে, যা জলাশয়ের অভাবে জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অস্ত্র, যুদ্ধ বা প্রাচীরের কোনো নিদর্শন ছাড়াই, সমাজটি ক্রমাগত সাংস্কৃতিক, শিল্প ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছিল। মাটির মূর্তি, মনিপূর্ণ হার, খোদাই করা হাড় ও জটিল শৈল্পিক নিদর্শন এই সমাজের ধৈর্য ও সৃজনশীলতার প্রমাণ।
আজও পেনিকোর কেন্দ্রীয় বৃত্তাকার প্লাজা এবং মন্দির পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। এই শহরের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন সভ্যতাও সংকটের সময় হিংসা নয়, সহযোগিতা এবং স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বেঁচে থাকার পথ বেছে নিয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক শিক্ষার বার্তা।