পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেন অপরিহার্য উপাদান। তবে কোটি কোটি বছর আগে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল অতি নগণ্য। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা বেড়ে ওঠে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এর বিস্ময়কর ব্যাখ্যা। গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি ধীর হওয়ার ফলেই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পৃথিবী ক্রমেই ধীর গতিতে ঘুরতে শুরু করে। চাঁদের মহাকর্ষীয় প্রভাবে এ গতি কমতে থাকে। আজ থেকে প্রায় ১৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর এক দিনের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ১৮ ঘণ্টা, আর বর্তমানে তা ২৪ ঘণ্টা। দিনের এই দীর্ঘায়নই অক্সিজেন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের অণুজীব সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে। প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে ‘দ্য গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’-এর সময় বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়, যেখানে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার অবদান ছিল সর্বাধিক।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সায়ানোব্যাকটেরিয়া শুধু সূর্যালোকের ওপর নির্ভরশীল নয়; তাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ারও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের হুরন লেকে এসব অণুজীবের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সূর্যোদয়ের পর অক্সিজেন উৎপাদনে তাদের কিছুটা প্রস্তুতির সময় প্রয়োজন হয়। দিনের দৈর্ঘ্য কম হলে অক্সিজেন তৈরির যথেষ্ট সময় তারা পায় না। কিন্তু দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অণুজীবগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
এভাবে দিনের দীর্ঘায়ন সায়ানোব্যাকটেরিয়ার জন্য অক্সিজেন তৈরির ‘উইন্ডো’কে প্রসারিত করেছে। এর ফলেই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ক্রমশ বেড়েছে। শুধু ‘গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’-এ নয়, বরং ৫৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে ‘নিওপ্রোটেরোজোইক অক্সিজেনেশন ইভেন্ট’-এর সময়ও একই প্রভাব দেখা যায়।
গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার পৃথিবীর পরিবর্তনকে অণুজীবের জীবনযাত্রার সঙ্গে আণবিক স্তরে যুক্ত করেছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন ও চাঁদের প্রভাবে আজ আমরা যে বায়ুমণ্ডল থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান উপাদান অক্সিজেন পাচ্ছি, তা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল।