বিশ্বজুড়ে কোটি নারীর জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যার নাম পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। বর্তমানে অনুমান করা হয়, পৃথিবীতে প্রায় ১৫ লাখ নারী এ সমস্যায় ভুগছেন। শুধু কিশোরী বা তরুণীরাই নয়, মেনোপজের কাছাকাছি বয়সী নারীরাও এর শিকার হতে পারেন। বাংলাদেশেও এর হার কম নয়—প্রায় ৮ থেকে ১৩ শতাংশ নারী এ জটিলতায় আক্রান্ত। সেপ্টেম্বর মাসকে ‘পিসিওএস সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়, যাতে নারীরা এই রোগ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সচেতন হতে পারেন।
এক বিশেষ আলোচনায় নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পিসিওএস হলো এক ধরনের হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা। সাধারণভাবে নারীদের মাসিক একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যা হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন সঠিক অনুপাতে তৈরি না হলে মাসিকের সময় গড়বড় দেখা দেয়। এ অবস্থায় অনেক সময় নারীর শরীরে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন তুলনামূলক বেশি থাকে। এর ফলেই মাসিক দেরিতে হয় বা একেবারেই হয় না, ডিম্বস্ফুটন বা ওভুলেশন ব্যাহত হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি ওভুলেশন ডিজফাংশন নামে পরিচিত।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক নারী প্রতি দুই–তিন মাস পরপর মাসিক পান, যা অনিয়মিত চক্রের মধ্যে পড়ে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে আলট্রাসোনোগ্রাফি করলে ডিম্বাশয়ের চারপাশে ছোট ছোট সিস্ট ধরা পড়ে। এক গবেষণায় প্রায় ১৬ হাজার বাংলাদেশি নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী পিসিওএস–এ আক্রান্ত।
পিসিওএস শুধু মাসিকের অনিয়মেই সীমাবদ্ধ থাকে না। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না নিলে তা নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। যেমন—হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় মাসিক দীর্ঘদিন না হলে জরায়ুর আস্তরণ পুরু হয়ে যায়, যা ভবিষ্যতে জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, বর্তমানে অনেক তরুণী বা কিশোরী গুগল সার্চের মাধ্যমে নিজেরাই মনে করছেন তাঁদের পিসিওএস আছে। কিন্তু আসলেই এটি নির্ধারণ করা যায় চিকিৎসক ও পরীক্ষার মাধ্যমে। তাই অনলাইনের তথ্য দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সঠিক পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পিসিওএস নিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার গুরুত্বও তুলে ধরেন। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই জটিলতাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে নারীর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসবে।