Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যপাকিস্তান–সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি: ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগ?

পাকিস্তান–সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি: ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগ?

পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রভাবশালী রাজতন্ত্র সৌদি আরবের এই ঘনিষ্ঠতা কেবল প্রতীকী নয়, বাস্তব নিরাপত্তা সমীকরণকেও নাড়া দিচ্ছে।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি বহুদিনের সহযোগিতার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপমাত্র। কিন্তু ভারতের বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে অন্য চোখে দেখছেন। কারণ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এবং কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে অতীতের একাধিক সংঘর্ষ দুই দেশের সম্পর্ককে সবসময়ই নাজুক করে রেখেছে।

ভারতীয় নিরাপত্তা মহলের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো—চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, দুই দেশের যেকোনো একটির ওপর আগ্রাসন ঘটলে সেটিকে উভয়ের ওপর আগ্রাসন হিসেবে ধরা হবে। অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রতি কোনো সামরিক পদক্ষেপ হলে তা সৌদি আরবের প্রতিও আঘাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধারা ভারতের জন্য সরাসরি নিরাপত্তা হুমকির আভাস বহন করছে।

কিছু ভারতীয় কূটনৈতিক মহল মনে করছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানকে নিরাপত্তা দানকারী হিসেবে গ্রহণ করা সৌদি আরবের জন্য কৌশলগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে একই সঙ্গে এ যুক্তিও এসেছে যে, রিয়াদ এই চুক্তির মাধ্যমে জনশক্তি ও পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তিকে নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে চাইছে। এর ফলে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য অংশীদারদের সামনে সৌদি আরব দেখাতে পারছে যে তারা নিজস্ব পথে এগোতে সক্ষম।

ভারতের সরকারি প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, এ চুক্তির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক সমীকরণের ওপর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারত আশা করছে, রিয়াদ দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় পারস্পরিক স্বার্থ এবং সংবেদনশীলতা মাথায় রাখবে।

তবে সব বিশ্লেষক যে আতঙ্কিত, তা নয়। কেউ কেউ মনে করেন, রিয়াদ ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী হওয়ায় তারা দিল্লির বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো প্রতিকূল পদক্ষেপ নেবে না। বরং এ চুক্তি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করে দিল্লিকে কিছুটা চাপে ফেলেছে।

ইতিহাস বলছে, ১৯৬০-এর দশক থেকে পাকিস্তান ও সৌদি আরব প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ঘনিষ্ঠ। পাকিস্তানি সেনাদের সৌদিতে মোতায়েন, ১৯৭৯ সালে মক্কা অবরোধ মোকাবিলায় সহায়তা, এমনকি সৌদি বিমানবাহিনী গড়ে তুলতে পাকিস্তানি প্রশিক্ষকদের অবদান—সবই এই দীর্ঘ সম্পর্কের সাক্ষ্য বহন করে। অতীতে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধেও সৌদি আরব ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে।

এবারের নতুন চুক্তিকে অনেকেই দেখছেন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতি আস্থা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক সংকট এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের মতো ঘটনাগুলো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে বিকল্প নিরাপত্তা অংশীদার খুঁজতে প্রণোদিত করছে। তাই সৌদি আরব পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই চুক্তি একটি বৃহত্তর সামরিক জোটে পরিণত হয়, তবে সেটি ভারতের ‘পশ্চিমমুখী’ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিকে জটিল করে তুলতে পারে। পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সৌদি আরবের আর্থিক শক্তি এবং রাজনৈতিক সমর্থন ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আরও বড় জোটের মুখোমুখি করতে পারে।

তবু বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, চুক্তিটি ভারতের জন্য তাত্ক্ষণিক সামরিক হুমকি নয়। তবে কূটনৈতিকভাবে নয়াদিল্লির জন্য এটি একটি নেতিবাচক সংকেত। ভবিষ্যতে এ চুক্তি আঞ্চলিক ভারসাম্যে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ভারতের কূটনৈতিক মহল তাই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments