যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একযোগে অনুষ্ঠিত হলো ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ। “নো কিংস” স্লোগানে আয়োজিত এ সমাবেশে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক অংশ নেন, যারা মনে করেন—আমেরিকা ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি।
শনিবার দেশব্যাপী আয়োজিত এই আন্দোলনকে আয়োজকেরা বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত অন্যতম বৃহত্তম ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদ। তাঁদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় ২ হাজার ৬০০ জায়গায় একযোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহু শহরের প্রধান সড়ক, পার্ক ও চত্বর রূপ নেয় উৎসবে পরিণত জনসমুদ্রে।
বিক্ষোভকারীরা হাতে ধারণ করেন নানা রকম প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—
“Nothing is more patriotic than protesting” (বিক্ষোভের চেয়ে বড় দেশপ্রেম আর কিছু নেই)
এবং “Resist Fascism” (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন)।
এই বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বার্তা দেওয়া—যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, তাই এখানে কোনো “রাজা” থাকতে পারে না।
বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নীতি দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার মুখে। তাঁর প্রশাসনের নানা সিদ্ধান্তকে নাগরিক অধিকার ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে করছে বহু নাগরিক ও নাগরিক সংগঠন। এই ক্ষোভই শনিবারের “নো কিংস” আন্দোলনে রূপ নেয়।
আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি তাঁর বিরুদ্ধে তৃতীয় বৃহৎ গণবিক্ষোভ। এর আগে বসন্তে বড় পরিসরে কর্মী ছাঁটাই এবং জুনে সামরিক প্যারেড আয়োজনের বিরুদ্ধেও দেশব্যাপী প্রতিবাদ হয়েছিল।
শাটডাউনের মধ্যে বিক্ষোভ
এই বিক্ষোভ এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার চলছে “শাটডাউন”-এর মধ্যে। গতকাল ছিল অচলাবস্থার ১৮তম দিন, যার কারণে অসংখ্য সরকারি কর্মসূচি ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার এই মুহূর্তে “নো কিং” আন্দোলন যেন এক নতুন বার্তা দেয়—কর্তৃত্ব নয়, জনগণই ক্ষমতার উৎস।
দেশজুড়ে আন্দোলনের চিত্র
নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার, বোস্টনের কমন, শিকাগোর গ্রান্ট পার্ক—সব জায়গায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। শান্তিপূর্ণ এই সমাবেশে অংশ নেন তরুণ-তরুণী থেকে প্রবীণ নাগরিক পর্যন্ত। অনেকে বলেন, এ আন্দোলন কেবল কোনো রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, বরং স্বাধীনতার চেতনা রক্ষার আহ্বান।
এই আন্দোলনের সূত্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে, স্পেনের মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায়ও শত শত মানুষ যুক্ত হন এই প্রতিবাদে।
কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে বার্তা
বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম “ইনডিভিসিবল”। সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা লেভিন বলেন, “একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির চেয়ে বড় হুমকি আর কিছু নেই।”
এই মন্তব্য যেন আন্দোলনের মূলে থাকা চিন্তাধারাকেই তুলে ধরে—একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রাণশক্তি হলো জনগণ, রাজা নয়।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন না; তিনি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে অবস্থান করছিলেন। এর আগের দিন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তাঁরা আমাকে রাজা বলছে, কিন্তু আমি রাজা নই।” যদিও তাঁর প্রশাসনের নীতি ও সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই এখন রাজতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিক্ষোভের পেছনের ইতিহাস
এ বছরের জুন মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের জন্মদিন ও মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক প্যারেড নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল অর্থ ব্যয়ে আয়োজিত ওই প্রদর্শনীকে অনেকে “অপচয়” হিসেবে আখ্যা দেন। শনিবারের “নো কিং” বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বহু মানুষ বলেন, সেই ক্ষোভই এই আন্দোলনের আগুনে নতুন ঘি ঢেলেছে।
সমাপ্তি ভাবনা
“নো কিংস” আন্দোলন এখন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এক নতুন প্রতীক। এটি প্রমাণ করেছে, কোনো প্রশাসনই জনগণের কণ্ঠস্বরকে চিরদিন উপেক্ষা করতে পারে না। আজকের এই আন্দোলন কেবল একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নয়, বরং এক প্রকার কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকার নাগরিকদের এক ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা।



