নেপালে টানা দুই দিনের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও রক্তপাতের পর দেশজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশের শীর্ষ নির্বাহী। এরপরই নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দেশের চলমান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য তরুণ বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের দাবি–দাওয়ার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব, যেখানে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে।
এর আগে সেনাপ্রধানও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিক্ষোভকারীদের সংযম দেখানোর অনুরোধ জানান। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতির অন্যায্য সুযোগ নেওয়া যাবে না।
সরকারি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তবে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার পর প্রেসিডেন্টও সরে দাঁড়িয়েছেন—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেনাবাহিনী পরে তা অস্বীকার করে জানায়, প্রেসিডেন্ট তাঁর দায়িত্বেই আছেন।
অপতথ্য, ঘৃণা ছড়ানো ও আইন না মানার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার থেকে নেপালে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। এক সপ্তাহ সময় দেওয়ার পরও ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, লিংকডইনের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন না করায় সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে টিকটক ও ভাইবারসহ কয়েকটি অ্যাপ সরকারের শর্ত মেনে নিবন্ধন করেছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত তরুণদের ক্ষোভকে উসকে দেয়। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব ও উচ্চপদস্থদের দুর্নীতির বিষয়ও যুক্ত হয়। বিশেষ করে ধনী রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন, সুবিধাভোগ ও অনলাইনে তা প্রদর্শনের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষত তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছে যায়।
এই ক্ষোভ থেকেই সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুসহ আটটি শহরে কয়েক হাজার তরুণ বিক্ষোভে নামেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেদিনই প্রাণ হারান ১৯ জন, আহত হন কয়েক শ বিক্ষোভকারী। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
কিন্তু অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে মঙ্গলবারও ভোর থেকে তরুণরা রাস্তায় নামেন। কারফিউ জারি করেও তাঁদের থামানো যায়নি। তারা সরকারি ভবন, নেতাদের বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ওই দিন আরও দুই বিক্ষোভকারী নিহত হন। ফলে দুই দিনে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু ও চার শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পার্লামেন্টকে নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানান। তবে কোনো দলই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ আলোচনায় তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন।