নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানো ও নামানোকে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্কের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের আঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার চৌরাস্তা মোড়সংলগ্ন ইলাসপুর এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবক ইলাসপুর গ্রামের একজন বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ট্রাকচালক ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি পরিচিত ছিলেন কর্মজীবী ও পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে। আকস্মিক এই ঘটনায় এলাকায় শোক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল নাগাদ শ্যামগঞ্জ ও বিরিশিরি সড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত পূর্বধলার চৌরাস্তা অটোরিকশা স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানো ও নামানো নিয়ে দুই চালকের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বিষয়টি দ্রুতই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই সময় পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে নিহত যুবক সেখানে এগিয়ে যান। তিনি দুই পক্ষকে শান্ত করতে চাইলে এক ইজিবাইকচালকের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
পরে আশপাশের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে বলে স্থানীয়রা জানান।
তবে ঘটনার এখানেই শেষ হয়নি। কিছুক্ষণ পর নিহত যুবক আবার চৌরাস্তা এলাকায় গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন বিষয়টি জানতে পারে। এরপর ওই ইজিবাইকচালক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন সহযোগীসহ সেখানে পৌঁছে নিহত যুবকের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় নিহত যুবকের পক্ষের লোকজন প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন শাবল দিয়ে নিহত যুবকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। অভিযুক্ত ইজিবাইকচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সদর সার্কেলের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানো ও নামানো এবং ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। তবে নিহত যুবক ও অভিযুক্ত পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ নিহত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানান, যাত্রী ওঠানো ও নামানো নিয়ে প্রায়ই বিরোধ তৈরি হয় এবং সেগুলো সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করা হলে বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। এলাকাবাসী দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।



