ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের একটি বড় গ্যাস চুক্তির ঘোষণা এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ সময়েই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একটি জ্বালানি কোম্পানির মাধ্যমে ইসরায়েল থেকে মিসরে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এই ঘোষণা আসে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যখন দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে বৈঠকে বসাতে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে।
বুধবার সন্ধ্যায় সম্প্রচারিত ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তিকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গ্যাস চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, চুক্তিটির মোট আর্থিক মূল্য ১১ হাজার ২০০ কোটি শেকেল, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের সমান। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মাধ্যমে ইসরায়েলের জ্বালানি খাত একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
চুক্তির বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কোম্পানি শেভরন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে মিসরে সরবরাহ করবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগ আঞ্চলিক জ্বালানি শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে। একই সঙ্গে এটি পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাঁর মতে, এই চুক্তির ফলে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক জলসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে অন্যান্য আন্তর্জাতিক কোম্পানির আগ্রহও বাড়বে এবং নতুন বিনিয়োগ আসবে।
ইসরায়েল সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, চুক্তিটি প্রকৃতপক্ষে অনেক আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক নানা কারণে কয়েক মাস ধরে এর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন স্থগিত রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রশাসনের চাপের মুখে ইসরায়েল সরকার চুক্তিটির অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়। এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল ও মিসরের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়া জোরদার করা এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের পরিসর আরও বিস্তৃত করার কথা বলা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, গ্যাস চুক্তির ঘোষণা এই সম্ভাব্য বৈঠকের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
তবে গ্যাস চুক্তি নিয়ে মিসরের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের পক্ষ থেকে মিসরের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মিসরের নীরবতা এই চুক্তি ঘিরে কৌতূহল আরও বাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৭৯ সালে দুই দেশ একটি ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মাধ্যমে মিসর প্রথম আরব দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। তবে সেই চুক্তির পরও বাস্তবতায় দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা গত প্রায় এক দশক ধরে প্রকাশ্যে খুব কমই মুখোমুখি হয়েছেন।
ইসরায়েলের আরেকটি সূত্রের দাবি, এই গ্যাস চুক্তির ঘোষণা মূলত ইসরায়েল ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের পথ সুগম করার কৌশল হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন গতি দেওয়ার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।
সামগ্রিকভাবে, এই গ্যাস চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি রাজনীতি, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



