ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক একটি বিমান হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। গাজায় কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফলে চুক্তি ভঙ্গের ঘটনায় ওয়াশিংটন বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওস সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, গাজা নগরীতে ইসরায়েলের চালানো ওই হামলায় হামাসের সামরিক শাখার এক উপকমান্ডার নিহত হওয়ার পরপরই হোয়াইট হাউস থেকে এই বার্তা পাঠানো হয়। ওই হামলায় মোট চারজন নিহত হন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পর এমন হামলা চুক্তির শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসের পাঠানো বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কঠোর ভাষায় বলা হয়, যদি তিনি নিজের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে চান এবং আন্তর্জাতিক মহলে এমন বার্তা দিতে চান যে তিনি চুক্তি মানেন না, সেটি তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে যেহেতু গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, তাই তাঁর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া হবে না। এই বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি রক্ষা করা তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিষয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েল সরকার আগাম কোনো তথ্য ওয়াশিংটনকে জানায়নি এবং হামলার আগে কোনো ধরনের আলোচনা বা সমন্বয়ও করা হয়নি। ফলে এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে, যা যুদ্ধবিরতির পরিবেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
গাজায় হামাসের পক্ষ থেকেও ওই হামলায় জ্যেষ্ঠ এক কমান্ডারের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সংগঠনটির গাজার প্রধান এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, বিমান হামলায় তাদের সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ উপকমান্ডার নিহত হয়েছেন। এই হামলা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।
গাজায় গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় উভয় পক্ষের পক্ষ থেকে সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিকবার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ শনিবারের বিমান হামলায় ওই হামাস কমান্ডার নিহত হওয়ার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর আগেও তাঁকে লক্ষ্য করে একাধিকবার হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে জানা গেছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বিভিন্ন হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৩ জন। এসব ঘটনার কারণে যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত মানুষের সংখ্যা ৭০ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। একই সময়ে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও হামলা অব্যাহত থাকায় গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউসের পাঠানো গোপন বার্তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকিয়ে রাখা এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ন রাখাই যে এই কড়া বার্তার মূল উদ্দেশ্য, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।



