অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব তাদের কনটেন্ট নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। এবার নিয়ম ভঙ্গের কারণে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হওয়া কনটেন্ট নির্মাতারাও নতুন করে প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ পাবেন। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব নির্মাতার চ্যানেল স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছিল, তারা নির্দিষ্ট সময় পর নতুন চ্যানেল খোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ইউটিউবের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণনীতির অন্যতম বড় সংস্কার হিসেবে দেখছেন। গত কয়েক বছর ধরে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক চাপ, কনটেন্ট পক্ষপাত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নানা বিতর্কে জড়িয়ে ছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইউটিউব নিজের ভাবমূর্তি নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো নির্মাতার চ্যানেল স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পর অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তিনি নতুন চ্যানেল তৈরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই সুযোগ পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—যে কারণে আগে চ্যানেলটি নিষিদ্ধ হয়েছিল, সেই ধরনের নিয়ম ভঙ্গ আর করা যাবে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নতুন এই প্রক্রিয়া ইউটিউবের প্রচলিত আপিল সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। অর্থাৎ, কোনো নির্মাতার আপিল প্রত্যাখ্যান হলেও, তিনি নির্দিষ্ট সময় পর নতুন করে আবেদন করতে পারবেন। তবে অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন চ্যানেল একেবারে শুরু থেকে তৈরি করতে হবে—পুরোনো চ্যানেলের ভিডিও, সাবস্ক্রাইবার বা আয় কোনোটিই স্থানান্তর হবে না।
ইউটিউব জানিয়েছে, আবেদন যাচাইয়ের সময় আবেদনকারীর পূর্ববর্তী কার্যক্রমের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মের বাইরে আচরণও পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিশেষ করে কপিরাইট লঙ্ঘন, ভুল তথ্য ছড়ানো, বা ‘ক্রিয়েটর রেসপনসিবিলিটি’ নীতিমালা ভঙ্গকারীরা এই সুযোগ পাবেন না।
প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন এই নীতি কার্যকর করা হবে। যারা যোগ্য, তারা ইউটিউব স্টুডিওর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। অনুমোদনের পর নির্মাতাদের আবার নতুনভাবে তাদের কনটেন্ট যাত্রা শুরু করতে হবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু নির্মাতাদের দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার পদক্ষেপ নয়, বরং এটি ইউটিউবের ওপর বাড়তে থাকা বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপেরও প্রতিফলন। দীর্ঘদিন ধরে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের কড়া নিয়ম ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগের মুখে থাকা ইউটিউব এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে—যেখানে কনটেন্ট নির্মাতারা শৃঙ্খলিত থেকে আবারও তাদের সৃজনশীল কাজ উপস্থাপন করতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তন কি ইউটিউবের প্রতি নির্মাতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে? নাকি এটি শুধুই একটি কৌশলগত পদক্ষেপ—সময়ই তার উত্তর দেবে।



