নিউ মেক্সিকোর ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা দীর্ঘদিন আড়ালে পড়ে ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের রাস্তার পাশে স্থাপন করা ঐতিহাসিক সাইনবোর্ডে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্থান পেলেও সেখানে নারীদের অবদান খুব কমই দৃশ্যমান ছিল। এই অসমতা দূর করার জন্য বহু বছর ধরে চলমান একটি উদ্যোগ এখন শিক্ষাঙ্গন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, যার লক্ষ্য—নারীর ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।
সম্প্রতি সান্তা ফেতে কয়েকজন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐতিহাসিক সাইনবোর্ড পরিদর্শনে গেলে তারা জানতে পারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা ও তাদের বহুমুখী অবদান। শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে একজন নারী বিমানচালককে নিয়ে তৈরি করা সাইনবোর্ড, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমদিকের নারী পাইলটদের একজন ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কারণে অসুস্থ হয়ে তিনি নিউ মেক্সিকোতে চলে আসেন এবং পরে স্থাপত্যশিল্পে খ্যাতি অর্জন করেন।
রাজ্যের এই নারীদের পরিচয় তুলে ধরার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় এক শতাধিক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে নিউ মেক্সিকোর ইতিহাসে স্থান পাওয়া নারীদের উল্লেখযোগ্য অবদান তুলে ধরা হয়েছে। এখন এই উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—গবেষণার ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের জন্য একটি পাঠ্যক্রম তৈরি করা হচ্ছে, যাতে স্কুল শিক্ষার্থীরা সহজেই নারীর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।
শিক্ষা–পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন শিক্ষকের ভাষ্য, “শুধু মেয়েশিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং সব শিক্ষার্থীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ—সমাজ গঠনে কারা ভূমিকা রেখেছেন, তা জানার সুযোগ পাওয়া।”
ইতিহাস সংশোধনের প্রয়াস
এই উদ্যোগ বহু বছর আগে শুরু হয়, যখন রাজ্যের একজন নারী নেত্রী লক্ষ্য করেন—দশকের পর দশক ধরে ঐতিহাসিক সাইনবোর্ডগুলোতে নারীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ২০০৬ সালে সরকারিভাবে অর্থায়ন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু হয়।
এরপর পুরো রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় নারীদের অজানা গল্প। প্রাক–ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে স্প্যানিশ ও মেক্সিকান শাসনামল, এমনকি নিউ মেক্সিকো রাজ্যে পরিণত হওয়ার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস—সব মিলিয়ে বহু নারীর জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সেইসব তথ্য এখন ছয় ফুট লম্বা সাইনবোর্ডে সংরক্ষিত রয়েছে। কেউ কেউ বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, আবার অনেকে স্থানীয় নায়িকা—যাদের গল্প আগে বড় কোনো মাধ্যমে জায়গা পায়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দুইজন নারী শিল্পীর কথা—যারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পুয়েবলো শৈলীর মৃৎশিল্প পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বহু শতাব্দী ধরে রোগ ও সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হারানো শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে তাদের অবদান ইতিহাসে বিশেষভাবে চিহ্নিত হবে।
কর্মসূচির একজন পরিচালক জানান, “এটি ন্যায়বিচারের মতোই একটি কাজ। এত অবদান রেখে যারা ভুলে গিয়েছিলেন, তাদের নাম তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।”
নির্দিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি কিছু সাইনবোর্ড উৎসর্গ করা হয়েছে নারী চিকিৎসক, স্থানীয় নিরাময়ক, সামরিক বাহিনীতে কাজ করা নারীদের। সেখানে উল্লেখ রয়েছে—নিউ মেক্সিকোর ইতিহাস কখনোই সংঘাত, ঔপনিবেশিক লড়াই কিংবা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আত্মরক্ষার ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতির নারীরা নিজেদের পরিবার ও সমাজ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন।
বর্তমানে নতুন সাইনবোর্ড তৈরি暂ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিচালনাকারীরা এখন বিদ্যমান সাইনবোর্ডগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষাক্রম তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
রাস্তা থেকে এবার স্কুলে
দশ বছরেরও বেশি আগে, রাষ্ট্রীয় পাঠ্যবইয়ে নারীদের ইতিহাসের স্বল্পতা দেখে এক শিক্ষকের মনে প্রশ্ন জন্মায়। পরে তিনি সাইনবোর্ড–ভিত্তিক অনলাইন ডাটাবেসের তথ্য খুঁজে পান এবং তা নিজের শ্রেণিকক্ষে পড়ানো শুরু করেন।
২০২২ সালে এই উদ্যোগের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, যাতে নারীদের জীবনী থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ K–12 পাঠ্যক্রম তৈরি করা যায়। ২০২৪ সালেও এই বরাদ্দ নবায়ন করা হয়েছে। আইনপ্রণেতারা মনে করেন—ইতিহাসকে বিকৃত করা উচিত নয়। ভালো–মন্দ সবকিছুই মনে রাখা প্রয়োজন, কারণ অতীতকে জানলেই ভবিষ্যৎকে সঠিক পথে চালনা করা সম্ভব।
এই উদ্যোগে প্রকাশ পাচ্ছে—একটি সমাজের ইতিহাস সম্পূর্ণ হয় তখনই, যখন সেখানে নারী–পুরুষ নির্বিশেষে সবার অবদান সমানভাবে সংরক্ষিত থাকে।



