Monday, December 1, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যনিউ অরলিন্সে উদ্বেগে অভিবাসী সম্প্রদায়

নিউ অরলিন্সে উদ্বেগে অভিবাসী সম্প্রদায়

নিউ অরলিন্স শহর বহুবার দুর্যোগের মুখে পরীক্ষিত হয়েছে। হারিকেন ক্যাটরিনা, বিপি অয়েল স্পিল, বড় হোটেল ধস, মহামারির শুরুতে ভয়াবহ সংক্রমণ এবং ২০২৫ সালের নববর্ষে সন্ত্রাসী হামলা সবকিছু মিলিয়ে এই শহর বহুবার ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এবার শহরের অভিবাসীরা মনে করছেন তাদের ওপর আরেকটি সঙ্কট নেমে আসছে। পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত দুই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী সীমান্ত টহল দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং প্রায় আড়াই শতাধিক ফেডারেল এজেন্ট ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিউ অরলিন্সে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করতে পারেন। স্থানীয় অভিবাসী অধিকারকর্মী এবং বাসিন্দারা বলছেন, পরিস্থিতির জন্য তারা ঠিক সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যেভাবে ভয়াবহ কোনো হারিকেনের আগে নেওয়া হয়।

অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের এক স্বেচ্ছাসেবী জানালেন যে সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রয়োজনীয় বাজারসদাই সেরে ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছেন এবং যতটা সম্ভব বাইরে বের না হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের ভাষায়, এটি যেন আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তবে এবার ভয়ের কারণ মানুষ।

তিন শতাধিক বছরের পুরনো এই শহরটি একটি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্যের অভ্যন্তরে অবস্থিত হলেও রাজনৈতিকভাবে ডেমোক্র্যাটপন্থী। অভিবাসন দপ্তরের আসন্ন অভিযান প্রেসিডেন্টের ঘোষিত বৃহৎ মাত্রার বিতাড়ন পরিকল্পনারই অংশ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সিএনএনের প্রশ্নের জবাবে দপ্তরের এক সহকারী সচিব বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তার স্বার্থে সম্ভাব্য অভিযান সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানানো হবে না।

অন্য শহরগুলোতে এ ধরনের অভিযানে মুখোশধারী সশস্ত্র ফেডারেল এজেন্ট এবং চিহ্নহীন গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এসব অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং অনাগরিক উভয়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে গুলিবর্ষণ, টিয়ার গ্যাস এবং ফ্ল্যাশব্যাং ব্যবহারের ঘটনা।

জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী নিউ অরলিন্সে প্রায় তেইশ হাজারের বেশি অভিবাসীর বসবাস, যা মোট জনসংখ্যার ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ। তাদের অর্ধেকেরও বেশি অনাগরিক। শহরের অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। অন্য শহরগুলোর তুলনায় এখানে অভিবাসীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হলেও স্থানীয় অর্থনীতি, বিশেষ করে সেবা খাত, অনেকাংশেই তাদের ওপর নির্ভরশীল। শহরের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোতে ক্রিয়োল এবং কাজুন খাবার রান্না থেকে শুরু করে হোটেল পরিচর্যা পর্যন্ত বহু কাজেই অভিবাসী শ্রমশক্তির ভূমিকা অপরিহার্য। হারিকেন ক্যাটরিনার পর পুনর্গঠনের সময়ও তাদের অবদান ছিল বিশাল। গবেষণায় দেখা গেছে তখনকার পুনর্গঠন শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেকই ছিলেন লাতিনো এবং তাদের এক চতুর্থাংশ ছিলেন অনিয়মিত অভিবাসী।

বর্তমানে অনেক শ্রমিক মনে করছেন তারাও হয়তো বৃহত্তর বিতাড়ন অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন। একটি জনপ্রিয় খাবারের দোকানের মালিক জানান যে গুজবের কারণে কর্মচারীরা কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন, ফলে তাকে নিজেরাই অতিরিক্ত সময় কাজ করে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। স্টাফ সংকটে সপ্তাহান্তে তাকে স্বাভাবিক সময়ের আগেই দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। তিনি কর্মীদের মৌলিক আইনি অধিকার সম্পর্কে অবহিত করছেন এবং প্রয়োজনে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন।

একটি মুদি দোকান চেইনের মালিক জানালেন যে তার দোকানে দৈনিক আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে কারণ স্থানীয় লাতিনো ক্রেতাদের বড় একটি অংশ বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি বিনামূল্যে ডেলিভারি সেবা চালু করেছেন এবং প্রয়োজনে কয়েকটি শাখা সাময়িকভাবে বন্ধ করার কথাও ভাবছেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এই ব্যবসায়ীর মতে, পরিস্থিতির কারণে তাকে প্রথমবারের মতো নিজ দেশে ফেরার কথাও ভাবতে হচ্ছে।

নির্মাণ খাতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন যে দক্ষ শ্রমিকরা ভয়ে কাজে আসছেন না যার ফলে তার বেশ কয়েকটি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ হয়ে আছে। অনেক শ্রমিক দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন যা সহজে পুরণীয় নয়।

একটি সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠনের এক নির্বাহী পরিচালক জানান, রেস্তোরাঁ এবং আতিথেয়তা খাতে কর্মী সংকট আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি শহরে অধিকার সচেতনতার উত্থান দেখে আশাবাদী। বিভিন্ন সংগঠন সম্মিলিতভাবে অধিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণ, হুইসল কিট বিতরণ এবং আইনি সহায়তার আয়োজন করছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সন্তানদের সুরক্ষার জন্য অভিভাবকদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং কাস্টডি পেপার সম্পন্ন করতেও সহায়তা করা হচ্ছে।

স্থানীয় অ্যাটর্নিদের মতে, এই অভিযান জননিরাপত্তার যুক্তিতে পরিচালিত হলেও আসল উদ্দেশ্য তা নয়। শহরের অপরাধ পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সহিংস অপরাধের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। তাদের মতে, এ ধরনের অভিযান সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং অনেকেই এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো একটি অবরোধ পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন।

নিউ অরলিন্সের নবনির্বাচিত মেয়রও জানিয়েছেন যে তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কারণ অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়েও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে রাজ্যপাল কঠোর অভিবাসন তৎপরতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

অনেকের মতে, এই শহর অতীতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার কারণে এখন নিজস্ব উপায়ে একে অপরকে সুরক্ষা দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে এই শহরের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাদের উদ্বেগ কমাতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments