নিউইয়র্ক নগরের বহুল আলোচিত মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে, আর ভোটের আগমুহূর্তে প্রকাশিত বিভিন্ন জরিপে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী মামদানি এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ পাওয়া চারটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, মামদানি শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। তবে একটি জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রধান তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর মধ্যে লড়াইটি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হতে পারে। ফলে বর্তমান মেয়রের পর কে নেতৃত্ব নেবেন, তা নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা যায়, মামদানি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। জরিপ অনুযায়ী, মামদানির প্রতি ৫০ শতাংশ এবং কুমোর প্রতি ২৫ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়া রয়েছেন আরও কিছুটা পিছিয়ে, ২১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে। বাকি ৪ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীন।
এছাড়া জরিপ অনুযায়ী, মামদানির সমর্থন গত মাসের তুলনায় বেড়েছে ৭ শতাংশ, কুমোর কমেছে ৩ শতাংশ এবং স্লিওয়ার সমর্থন বেড়েছে ১১ শতাংশ। এই জরিপটি ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত হয়, যেখানে সম্ভাব্য ভোটার ও আগাম ভোটদাতারা অংশ নিয়েছেন। ত্রুটির সীমা ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
জরিপ সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামদানি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে জোট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন গত মাসের ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে, বিপরীতে কুমোর সমর্থন ১০ পয়েন্ট কমেছে।
তরুণ ভোটারদের মধ্যেও মামদানি শক্ত অবস্থানে আছেন। ৫০ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ তাঁর পক্ষে। ৫০ বছরের বেশি বয়সী ভোটারদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ মামদানিকে, ৩১ শতাংশ কুমোকে এবং ২৮ শতাংশ স্লিওয়াকে সমর্থন করছেন।
অন্য একটি জরিপে দেখা যায়, মামদানি কুমোর চেয়ে ১৬ পয়েন্টে এবং স্লিওয়ার তুলনায় ৩২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মামদানির প্রতি ঝুঁকেছেন, যেখানে কুমোর পক্ষে ৩২ শতাংশ এবং স্লিওয়ার প্রতি ১৬ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।
জরিপটি ২৪ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলেছে, যেখানে ত্রুটির সীমা ৪ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে করা জরিপেও প্রায় একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। তখন মামদানির প্রতি ৪৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ছিল, যা বর্তমানে বেড়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্লিওয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান, তবে মামদানির সমর্থন ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যেখানে কুমো সমর্থন পাবেন ৪৪ শতাংশ ভোটারের। উল্লেখ্য, কুমো ২০২১ সালে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এক বিতর্কিত ঘটনায়।
আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী, মামদানি বর্তমানে ৪৩ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটারের সমর্থন পাচ্ছেন, যেখানে কুমোর ৩৩ শতাংশ এবং স্লিওয়ার ১৪ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, আগাম ভোট শুরু হয়েছে, এবং মামদানি এখন কুমোর চেয়ে প্রায় ১০ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের ভোট ফলাফল বদলে দিতে পারে।
২৩ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৬ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নেননি—যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণ। সেপ্টেম্বরে মামদানি কুমোর চেয়ে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন, তবে সাম্প্রতিক জরিপে পার্থক্য কমে ১০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়ার ভোটই হতে পারে এই নির্বাচনের ‘গেম চেঞ্জার’। তাঁর ১১ শতাংশ ভোটারদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে কুমোকে বেছে নিয়েছেন, যেখানে মামদানিকে মাত্র ২ শতাংশ।
অ্যাস্টোরিয়া এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মামদানি প্রচারের বড় অংশ ব্যয় করেছেন মধ্যপন্থী ও রক্ষণশীল ভোটারদের আশ্বস্ত করতে। কারণ তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে পরিচিত, যিনি পুলিশের বাজেট কমানোর পক্ষে এবং ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানে দৃঢ়।
একটি জরিপ অনুযায়ী, এই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি (৫১ শতাংশ) বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনের দিন সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ৩৮ শতাংশ আগাম ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন এবং ১২ শতাংশ ডাকযোগে ভোট দেবেন। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া ভোটারদের মধ্যে মামদানির প্রতি সমর্থন ৫২ শতাংশ, কুমোর ৩২ শতাংশ এবং স্লিওয়ার ১৫ শতাংশ।
সবশেষ তথ্য বলছে, নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোটের মাঠে মামদানি এখনো এগিয়ে আছেন, তবে সিদ্ধান্তহীন ভোটাররাই হয়তো নির্ধারণ করবেন এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল।



