নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক নির্বাচনে অভূতপূর্ব ভোটের ব্যবধানে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন সিটি কাউন্সিলের এক নারী সদস্য, যিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির গর্ব হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রামের নাজিরহাটের পূর্ব ফরহাদাবাদ এলাকায় শিকড় থাকা এই কাউন্সিল মেম্বার এবার ব্রুকলিনে নতুন ইতিহাস গড়ে দেখালেন।
গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি মোট ৫১,৬৫৩ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, কনজারভেটিভ পার্টির একজন প্রার্থী, পেয়েছেন ৫,২১৮ ভোট। ভোটের এই বিশাল ফারাক শুধু তার জনপ্রিয়তাকেই তুলে ধরেনি, বরং নিশ্চিত করেছে তার প্রতি জনগণের দীর্ঘদিনের আস্থা।
২০২১ সালে তিনি প্রথমবার নির্বাচিত হন এবং নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম নারী কাউন্সিল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই প্রথম মেয়াদ থেকেই তিনি তার কর্মক্ষমতা ও নেতৃত্বগুণের জন্য পরিচিতি পান। বিভিন্ন কমিউনিটিভিত্তিক কাজ, নাগরিক অধিকার রক্ষা এবং প্রগতিশীল নীতির পক্ষে সোচ্চার অবস্থান তাকে দ্রুতই ব্রুকলিনবাসীর প্রিয় প্রতিনিধিতে পরিণত করে।
তার নির্বাচনি এলাকা সিটির কেনসিংটন, পার্ক স্লোপ, কারল রামেল হিলসহ বৃহত্তর ব্রুকলিন অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত। দায়িত্বের প্রথম মেয়াদে এই কাউন্সিল মেম্বার এলাকার পার্ক উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, স্কুল অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি এবং অভিবাসী কমিউনিটির অধিকার সুরক্ষায় কাজ করেছেন।
তার উদ্যোগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
-
ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার প্রোটেকশন অ্যাক্ট,
-
গর্ভপাত অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আইন,
-
লুপাস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিল।
এই আইনি অর্জনগুলো তার নেতৃত্বের সাফল্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে তিনি কমিউনিটির প্রতিটি মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন।
বিজয়ের পর তিনি জানান, এই জয় একজন ব্যক্তির নয়—এটি পুরো কমিউনিটির বিজয়। তার ভাষায়, এই ফলাফল প্রমাণ করেছে যে বৈচিত্র্যকে ধারণ করে এবং সম্মান বজায় রেখে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের কণ্ঠ ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিক থাকবে এবং কমিউনিটির প্রত্যাশা পূরণে তিনি সবসময় কাজ করে যাবেন।
পরিবারগতভাবে তিনি কমিউনিটির পরিচিত একটি পরিবারের সদস্য। তার পিতা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সামাজিক সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে জনসেবামূলক কাজে তার সম্পৃক্ততা নতুন নয়।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে তার প্রবল জয় প্রমাণ করেছে—কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি থাকলে জনআস্থা অর্জন করা যায়। ব্রুকলিনের ভোটাররা এবার তা আরও স্পষ্ট করে দিলেন।
এই বিজয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারী, অভিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। নগর প্রশাসনে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব কীভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে—তার আরেকটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই নির্বাচন।



