বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে দলটির নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
৩১ অক্টোবর, শুক্রবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাটা এখন সময়ের দাবি। তবে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি, আর পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্যসহ পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির প্রতিনিধিরা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক দলের নেতাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অভিযোগ করেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তিনি বলেন, সরকার এখনো তার নিরাপত্তা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। বরং কিছু সংস্থা বিভিন্ন অজুহাতে তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতে ১/১১ সময়কালীন সরকার অন্যায়ভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল। পরবর্তীতে আদালতের রায়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দলের নেতারা এবার নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া দেশে ফেরার বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সহ-সভাপতির পদত্যাগ দাবি করা হয়। বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী একটি ধর্মভিত্তিক দলের বিরুদ্ধেও সংবিধান সংশোধন বিষয়ে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনা হয়। বক্তারা মনে করেন, এই ধরনের প্রভাব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।
পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার পূর্বে সরকারের উচিত তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকার যদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়, তবে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
সংগঠনের সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা সবসময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি মনে করেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করবে।
বক্তারা আরও বলেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা। তাই দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে দলীয় নেতারা দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল নেতাকর্মীদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তারা বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি আবারও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু দলের বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।



