নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সোসাইটি ও বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির মধ্যে কবর ক্রয় সংক্রান্ত একটি অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘটনা। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে বাংলাদেশ সোসাইটির হাতে ফেরত এসেছে ২ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির আওতাধীন বাংলাদেশ সেমিট্রি থেকে এক হাজার কবর ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় রেজ্যুলেশনও পাস হয়। তবে বাস্তবে ১ হাজার কবর নয়, মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের কবর ক্রয়ের চেক দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেমিট্রির নামে।
অপরদিকে, নতুন নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন সেলিম-আলী পরিষদের নেতৃত্বাধীন কমিটি। তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর। তবে অভিষেকের ঠিক আগে সাবেক কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেমিট্রির নামে কবর ক্রয়ের চেক হস্তান্তর করা হলে নবনির্বাচিত নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নতুন কমিটি অভিযোগ তোলে যে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে সোসাইটির তহবিল প্রায় খালি করে দেওয়া হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তদন্তে জানা যায়, সোসাইটির অ্যাকাউন্টে এখনো প্রায় এক লাখ ডলার অবশিষ্ট ছিল।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকে জানানো হয়, নোয়াখালী সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটি বিষয়টি নিয়ে সভা করবে এবং সিদ্ধান্ত জানাবে। শেষ পর্যন্ত কার্যনির্বাহী কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ড ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় অর্থ ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সেই সিদ্ধান্তের আলোকে গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ব্রুকলিনে অবস্থিত নোয়াখালী সোসাইটির কার্যালয়ে যান। সেখানে নোয়াখালী সোসাইটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির হাতে ২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের চেক তুলে দেওয়া হয়। চেক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উভয় সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এই অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া অনুযায়ী মোট ১৮টি চেক প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চেকটি ৫০ হাজার ডলারের, যা চলতি অক্টোবর মাসে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার ডলারের চেক জমা দেওয়া হবে। তবে ২০২৭ সালে দুইটি চেক ২০ হাজার ডলার করে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি মানবিক বিবেচনায় এত বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দিলো। প্রবাসী মহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এ ধরনের ফেরত বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন—যদি এই কবরগুলো বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হতো, তাহলে কি অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব হতো? অনেকে আরও বলছেন, কবরের এই দামে আর জমি পাওয়া সম্ভব নয়, ফলে ভবিষ্যতে আবার প্রয়োজন হলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হবে।
সব মিলিয়ে, এই ঘটনাটি প্রবাসী কমিউনিটির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পারস্পরিক সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব—এমন বার্তাই দিয়েছে এই সিদ্ধান্ত।



