যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল নিজ দেশের ভোটাধিকার অর্জন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রাপ্তির সুযোগ পাওয়া। সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি প্রদানের কার্যক্রম। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটগুলো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা প্রবাসীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, প্রবাসীদের জন্য এনআইডি আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং করণীয় বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সেলিম, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল হক, যিনি প্রবাসীদের জন্য এনআইডি প্রাপ্তির যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্টধারী এবং যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ১৮ বছরের বেশি বয়সী (যারা ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মেছেন) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা এনআইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করতে প্রয়োজন হবে জন্মসনদের কপি বা নম্বর (১৭ সংখ্যার), এবং বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি।
তিনি আরও বলেন, “পাসপোর্ট ও জন্মসনদে থাকা নাম ও জন্মতারিখ এক হতে হবে। যদি কোনো গরমিল থাকে, তবে আবেদনটি গ্রহণ করা হবে না।” এছাড়া তিনি জানান, যারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এনআইডির জন্য আবেদন করেছেন, তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। নিউইয়র্ক থেকে শুধুমাত্র নতুন আবেদনকারীদের জন্য এনআইডি ইস্যু করা হবে।
কনসাল জেনারেল জানান, এনআইডি পাওয়ার পর প্রবাসীরা চাইলে এখান থেকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবেন। যারা প্রবাসে থেকেই ভোটার হবেন, তারা এখান থেকেই ভোট দিতে পারবেন। আর যারা শুধুমাত্র এনআইডি নিবেন কিন্তু ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হবেন না, তারা বাংলাদেশে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি আবেদনকারীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আবেদন ফর্মে বাংলাদেশে একজন অভিভাবক বা যোগাযোগকারীর নাম ও ফোন নম্বর অবশ্যই দিতে হবে এবং তাকে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। নচেৎ আবেদন প্রক্রিয়া ঝুলে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং কনসুলেট কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি সেলিম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও এনআইডির দাবিতে কাজ করেছি। অবশেষে সেই দাবি বাস্তবে রূপ নিয়েছে, যা প্রবাসীদের জন্য বড় অর্জন।”
সভায় বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নেওয়াজ, সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান, সহ-সভাপতি কামরুল, ট্রাস্টি সদস্য বোরহান, আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী, এবং কর্মকর্তা জিলানীসহ প্রবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রবাসীদের এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন এবং এনআইডি প্রক্রিয়াকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
কনসাল জেনারেল বলেন, “নিউইয়র্ক কনস্যুলেট থেকে এনআইডি কার্যক্রম এখন কিছুটা ধীরগতিতে চলছে, তবে আমরা পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আগামী দিনে এটি আরও দ্রুত এবং সহজসাধ্য করা হবে।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। এনআইডির মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন—যা দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তব রূপ।



