যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক মেয়র নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এক অভিবাসী পরিবারের সন্তান, যিনি প্রথম মুসলিম হিসেবে এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর এই জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, বরং বিশ্বজুড়ে প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে এনেছে।
লন্ডনের মেয়র, যিনি নিজেও মুসলিম ও অভিবাসী পরিবারের সন্তান, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গভীর আগ্রহ নিয়ে নিউইয়র্কের এই বিজয় পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর ভাষায়, এটি ছিল ‘উদার, প্রগতিশীল ও বহু-সংস্কৃতির রাজনীতির এক চমৎকার সাফল্য’। ভোটাররা ভয়, বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতিকে উপেক্ষা করে ঐক্য ও সহনশীলতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
নিউইয়র্কে এই নির্বাচনে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মুসলিম প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই ফলাফল লন্ডনের মেয়রের নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, তাঁর ক্ষেত্রেও একইভাবে ধর্মীয় পরিচয়কে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু জনগণ শেষ পর্যন্ত ঐক্য ও আস্থার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মেয়র সম্মেলন থেকে দেওয়া এক বক্তৃতায় লন্ডনের মেয়র বলেন, “এই জয় ভয়কে পরাজিত করার এবং বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্যের বার্তা দেয়।” তাঁর মতে, অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো হয় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের বিশ্বাস ও সহমর্মিতাই জয়ী হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রায়ই ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জনগণ কখনোই ঘৃণার রাজনীতিকে স্থায়ী করতে দেয় না। আমি যেমন লন্ডনের নাগরিকদের কাছে গর্বিত, তেমনি নিউইয়র্কের জনগণের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল—কারণ তারা বৈচিত্র্যের জয় ঘটিয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, লন্ডন ও নিউইয়র্ক উভয় শহরেই সংখ্যালঘু প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতির রাজনীতি চালানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি। তাঁর মতে, ধর্মীয় পরিচয় কোনো নেতার রাজনীতির মূল বিষয় নয়—মূল বিষয় হলো জনগণের সেবা ও সৎ নেতৃত্ব প্রদান।
এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “আমি একজন মেয়র, মুসলিমও বটে—কিন্তু আমার পরিচয় আমার দায়িত্বকে সীমিত করে না। নিউইয়র্কের নতুন মেয়রও একই বাস্তবতার প্রতীক।”
লন্ডনের মেয়র সমাজতান্ত্রিক নন, তবে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাঁর মতে, এই মতবাদ ইউরোপে শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, নিউইয়র্কে নতুন মেয়রের বিজয়, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের জয়—সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রগতিশীল রাজনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও একটি শিক্ষণীয় বার্তা।
নিউইয়র্কের এই নির্বাচন বিশ্বজুড়ে প্রমাণ করেছে, ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় নয়—জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও প্রগতিশীল ভাবনা দিয়েই রাজনীতি টিকে থাকে।



