নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধকালীন জোট অটুট রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির শীর্ষ নেতা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রক্ত, জীবন ও মৃত্যুর অভিজ্ঞতা একসঙ্গে ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানকে পাঠানো এই নববর্ষের বার্তায় দুই দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ধারাবাহিকতায় এই বার্তা পাঠানো হয়। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। সেই বার্তায় তিনি রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে পিয়ংইয়ং থেকে পাঠানো সেনাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। রুশ নেতৃত্বের মতে, ওই সেনাদের সাহসী অবস্থান দুই দেশের মধ্যকার অটুট ও অপরাজেয় সম্পর্কের স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছে।
শনিবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানকে পাঠানো নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তার পূর্ণাঙ্গ অংশ প্রকাশ করে। সেখানে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা উল্লেখ করেন, ২০২৫ সাল দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাষায়, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক শুধু বর্তমান সময়ের কূটনৈতিক বাস্তবতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি মূল্যবান ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
বার্তায় আরও বলা হয়, দুই দেশের জনগণ ও তাদের পারস্পরিক ঐক্যের সম্পর্ক এমন একটি স্তরে পৌঁছেছে, যাকে কোনো শক্তিই দুর্বল করতে পারবে না। এই ঐক্য দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও টিকে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমর্থন যে সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে, সেটিও বার্তায় স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও বিভিন্ন পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার সেনা রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সেনারা বিভিন্ন ফ্রন্টলাইনে মোতায়েন রয়েছে এবং সরাসরি যুদ্ধাভিজ্ঞতা অর্জন করছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতি সমর্থন জানাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারা স্বীকার করে যে, ওই অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার কিছু সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহযোগিতার মাত্রা নিয়ে নতুন করে নজর কাড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, নববর্ষের এই বার্তা শুধু সৌজন্যমূলক শুভেচ্ছা নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক ঘোষণা। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, তার ভেতরে দাঁড়িয়ে মস্কো ও পিয়ংইয়ং নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করছে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে যৌথ ইতিহাসের অংশ হিসেবে তুলে ধরে দুই দেশ ভবিষ্যতেও এই জোট বজায় রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই বার্তার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, সামরিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক সমর্থন এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে। নতুন বছরে এই সম্পর্ক কোন দিকে অগ্রসর হয়, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



