Friday, November 21, 2025
spot_img
Homeএডুকেশননটিংহ্যামে ভাষা-সঙ্গীত শিক্ষায় বড় ধাক্কার আশঙ্কা

নটিংহ্যামে ভাষা-সঙ্গীত শিক্ষায় বড় ধাক্কার আশঙ্কা

নটিংহ্যামের একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ও সঙ্গীতসহ মোট ৪৮টি ডিগ্রি প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যার পেছনে কমে যাওয়া আয় এবং বাড়তি পরিচালন ব্যয়ের চাপকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হলে এটি হবে রাসেল গ্রুপের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে আধুনিক বিদেশি ভাষার ডিগ্রি আর পড়ানো হবে না। ইতোমধ্যে স্প্যানিশ, ফরাসি, সঙ্গীতসহ বহু কোর্সের জন্য আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তির আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে, যা সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল আগামী সপ্তাহে এসব প্রোগ্রামের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। তবে কর্মীদের একটি বড় অংশ শঙ্কায় আছে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের আগেই কোর্সগুলোতে ভর্তির আবেদন স্থগিত রেখেছে। ভাষা কেন্দ্রের সমর্থকরা বলেন, প্রোগ্রামগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ইস্ট মিডল্যান্ডস অঞ্চল কার্যত একটি “ভাষাগত মরুভূমিতে” পরিণত হবে। এর আগেই অঞ্চলের আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শিক্ষা কমানোর প্রস্তাব এসেছে।

এই সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক, সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিশিষ্ট গবেষকদের মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মতে, আধুনিক বিদেশি ভাষায় এই ধরনের “অযৌক্তিক” কাটছাঁট শুধু প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করবে না, বরং জার্মান, চীনা ও অন্যান্য ভাষায় সমৃদ্ধ যে শিক্ষা কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটিও বিপন্ন হবে।

ভাষা স্কুলের পরিচালক বলেন, পুরো একটি প্রজন্ম যারা ভাষাবিদ, অনুবাদক বা সাংস্কৃতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে চায়, তারা ভৌগোলিকভাবে বঞ্চিত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক চাকরি হারানোর আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মীদের সংগঠন আন্দোলনে গেলেও প্রশাসন আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ছাঁটাই না করার আশ্বাস দেওয়ায় ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষাকর্মী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জানান, প্রস্তাবিত কোর্স বন্ধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে, যদিও গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিল বৈঠকের আগে সময় খুবই সীমিত। তার মতে, যেসব ডিগ্রি স্থগিত বা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে সেগুলোকে প্রশাসন ভুলভাবে “অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর” বলে ধরে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটি রাসেল গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ও সঙ্গীতবিহীন হয়ে গেলে এর পরিচিতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কেউ কেউ এটিকে “লিটল ইংল্যান্ড”-এ পরিণত হওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।

তিনি জানান, বিষয়টি শুধু আর্থিক নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমনে সম্ভাব্য হ্রাস, স্নাতক পর্যায়ে অতিরিক্ত “ব্যবহারিক” বিষয়ে ঝোঁক—এসবকেই নীতিনির্ধারকরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু আধুনিক ভাষা কিংবা সঙ্গীতকে “অপ্রয়োজনীয়” মনে করা এক ধরনের ভুল ধারণা, কারণ এসব বিষয়ে দক্ষতার মূল্য সবসময়ই উচ্চ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই তারা কমে যাওয়া আয় এবং বাড়তি ব্যয়ের চাপে আর্থিক কাঠামো মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। সরকার স্থানীয় টিউশন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফি-এর ওপর কর আরোপের ফলে সম্ভাব্য লাভ অনেকটাই কমে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাষা ও সঙ্গীত বিষয়ে ছাত্রভর্তির হার দৃশ্যমানভাবে কমে এসেছে, যা সমাজের রুচি-পরিবর্তন, জনসংখ্যাগত বাস্তবতা এবং নতুন ক্যারিয়ার পছন্দের প্রতিফলন।

বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তারা ডিগ্রি প্রোগ্রাম থেকে আলাদা কাঠামোয় ভাষা ও সঙ্গীত শিক্ষার কিছু দক্ষতাভিত্তিক চর্চা বজায় রাখার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে সঙ্গীত বিভাগের প্রধান বলেন, তাদের বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য সুরকার, গবেষক, পরিবেশক ও শিক্ষাবিদ তৈরি করেছে এবং দেশের শীর্ষ শিল্পসংস্থাগুলোর নেতৃত্বেও তাদের প্রাক্তনীদের দেখা যায়। তিনি জানান, বিভাগটি স্থানীয় স্কুল ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাই এটি বন্ধ হয়ে গেলে কেবল একটি সমৃদ্ধ একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়বে না, পুরো অঞ্চলের সঙ্গীতচর্চার ভবিষ্যতও বিপন্ন হবে।

সঙ্গীত বিভাগ রক্ষার জন্য করা আরেকটি পিটিশনেও প্রায় ১৫ হাজার স্বাক্ষর যুক্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের প্রায় এক হাজারের মতো পড়াশোনাভিত্তিক কোর্স রয়েছে এবং প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো এর পাঁচ শতাংশেরও কম অংশে প্রভাব ফেলবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments