দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবার অ্যানথ্রাক্সের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই রোগটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে এবং কখনো কখনো তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত আক্রান্ত প্রাণী থেকে ছড়ায়। এ ছাড়া মাটিতেও জীবাণু থাকতে পারে। কেউ যদি আক্রান্ত প্রাণীর কাঁচা বা অর্ধেক রান্না করা মাংস খায়, অথবা জীবাণু শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, তবে তিনি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এটি সাধারণ শ্বাসনালীর সংক্রমিত রোগের মতো হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। এছাড়া যদি ত্বকে কোনো ক্ষত থাকে, সেই ক্ষতের মাধ্যমে জীবাণু সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ প্রধানত কীভাবে জীবাণু প্রবেশ করছে তার ওপর নির্ভর করে। খাদ্যদ্বারা সংক্রমিত হলে রোগীর মধ্যে বমিভাব, বমি, রক্তমিশ্রিত বমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধাহ্রাস, জ্বর, গলাব্যথা এবং ঘাড় ফুলে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। কিছুদিন পর রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে, যা অত্যন্ত তীব্র হয়।
শ্বাসনালীর মাধ্যমে সংক্রমিত হলে শুরুতে সাধারণ উপসর্গ যেমন গলাব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি ও পেশি ব্যথা দেখা দেয়। এরপর রোগী বুকে অস্বস্তি এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারে। বমিভাব এবং কফের সঙ্গে রক্ত আসা সম্ভব। ঢোঁক গিলতে গেলে ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের পর্দায় প্রদাহ দেখা দিতে পারে। রক্তচাপও কমে যেতে পারে।
ত্বকের মাধ্যমে সংক্রমিত হলে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ক্ষত তৈরি হয়। ক্ষতে চুলকানি দেখা যায়। প্রাথমিক ব্যথা দ্রুত কমে যায়, তবে ক্ষতের মধ্যভাগ কালো হয়ে যায় এবং আশেপাশের অংশও ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও জ্বরও থাকে।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সেদ্ধ না হওয়া মাংস কখনোই খাওয়া উচিত নয়। ত্বকে কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস বা অর্ধেক রান্না করা মাংস নাড়াচাড়া করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করা আবশ্যক। গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক পশুদের অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়া, সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ পশুর মাংস খাওয়া বা তার সঙ্গে সংস্পর্শ এড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সর্বশেষে, অ্যানথ্রাক্সের সম্ভাব্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত যত্ন এবং সচেতনতা অপরিহার্য। সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।