Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনদুই বছর পর আবারও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বার্তা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফরে নতুন প্রত্যাশা

দুই বছর পর আবারও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বার্তা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফরে নতুন প্রত্যাশা

দুই বছর আগে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল সফরে যান, তখন দেশজুড়ে ছিল ভয়, অনিশ্চয়তা আর গভীর ক্ষতের দাগ। গাজা থেকে রকেট হামলার আতঙ্কে আকাশজুড়ে ছিল সাইরেনের শব্দ। তবে এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট—যেখানে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তির খবর এনে দিয়েছে এক ঝলক শান্তির আশ্বাস।

দুই বছর আগের সেই সফরটি ছিল এক উত্তপ্ত সময়ের পর। হামাসের আকস্মিক হামলায় নিহত হয়েছিল প্রায় ১২০০ মানুষ, এবং দুই শতাধিককে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজায়। পুরো দেশ তখন শোকে স্তব্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগমন ছিল সহমর্মিতা ও সংযমের বার্তা নিয়ে। তিনি ইসরায়েলি নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিলেন, যেন প্রতিশোধের আগুনে মানবতার ক্ষতি না হয়। “রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন, প্রতিশোধে নয় বরং প্রজ্ঞায় সাড়া দিন”—এমন আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি, ৯/১১-পরবর্তী আমেরিকার ভুল সিদ্ধান্তগুলোর উদাহরণ টেনে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই আহ্বান যেন হারিয়ে যায় যুদ্ধের তীব্রতায়। গাজায় টানা অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গোটা অঞ্চল, নিহত হয় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ। আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও অনেক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে ফের আলোচনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার অংশ হিসেবে জীবিত ২০ জন জিম্মি মুক্তি পাবে এবং মৃতদের দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হবে। ইসরায়েলও এখন সামরিক অভিযান থেকে সরে এসে পুনর্গঠনের দিকে নজর দিচ্ছে।

সোমবার তিনি ইসরায়েল পৌঁছানোর পর দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন এবং জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। এরপর তিনি যাবেন মিশরের শারম আল শেখে, যেখানে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর হবে বিভিন্ন দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি ও ইতালির নেতারাও থাকবেন এই অনুষ্ঠানে।

অনেকের মতে, এই চুক্তি নতুন প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক দক্ষতার বড় উদাহরণ। কেউ কেউ এমনকি নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিও তুলেছেন তার জন্য। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি একদিনে অর্জিত সাফল্য নয়—বরং আগের প্রশাসনের রেখে যাওয়া কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই এই শান্তি প্রক্রিয়া গড়ে উঠেছে।

এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, “এই পরিকল্পনাটা মূলত আগের প্রশাসনের সময় তৈরি হয়েছিল। নতুন সরকার সেটাকে আরও দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করেছে।” অন্যদিকে, বর্তমান প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন সময়টাই ছিল উপযুক্ত—ইসরায়েলের আর সামরিকভাবে কিছু অর্জনের ছিল না, আর হামাসও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ক্লান্ত।

তবুও সংশয় রয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পথে এখনো বহু বাধা আসতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি যে কতটা নড়বড়ে, ইতিহাস বারবার তা প্রমাণ করেছে। তবুও এই মুহূর্তে আশাবাদ কাজ করছে—দীর্ঘ যুদ্ধের পর হয়তো অবশেষে শুরু হচ্ছে শান্তির এক নতুন অধ্যায়।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যুদ্ধ থেকে। হয়তো এটাই শান্তির প্রথম শর্ত।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments