২০২৪ সালে মার্কিন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের গড় পড়া ও গণিতের ফলাফল নেমে এসেছে গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষাগত অগ্রগতি মূল্যায়ন (NAEP) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় পড়ার স্কোর ১৯৯২ সালের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমেছে। অন্যদিকে, গণিতে অর্জিত ফলাফল ২০০৫ সালের পর সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। এ পরীক্ষা নিয়েছিল মার্কিন শিক্ষা বিভাগের অধীন ন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস (NCES), যেখানে অংশ নেয় প্রায় ১৯,৩০০ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী গণিতে, ২৪,৩০০ শিক্ষার্থী পড়ায় এবং ২৩,০০০ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিজ্ঞানে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ৩৫ শতাংশ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পড়ায় এবং ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে দক্ষতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে মৌলিক স্তরের নিচে স্কোর করেছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। পড়ায় মৌলিক স্তরের নিচে থাকা শিক্ষার্থীর হার দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড মহামারির সময় স্কুল বন্ধ ও অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় বড় প্রভাব ফেললেও, ফলাফলের এই নিম্নগতি শুরু হয়েছিল এর আগেই। ২০১৫ সালের পর থেকে নিম্নফলনশীল শিক্ষার্থীদের ফলাফল ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগের মাসে অন্তত তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত ছিল। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ২৫ শতাংশ। ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার সময় কমছে এবং শিক্ষকরা বারবার পুরোনো পাঠ পুনরায় শেখাতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও পাঠাভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে সহজে তথ্য পাওয়ার কারণে সরাসরি ক্লাসে উপস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করছে।
সমাধান হিসেবে বিশেষজ্ঞরা স্কুলে বাড়তি পড়াশোনার সময় নির্ধারণ এবং শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু অঙ্গরাজ্যে ইতোমধ্যেই ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন সিনেটে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায়ও স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একাধিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞের মতে, এই প্রযুক্তি কেবল মনোযোগ বিভ্রান্ত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষা নীতিনির্ধারকদের একাংশ মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় পর্যায়ে ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে রাজ্য ও বিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিতে পারে। অন্যদিকে, ভিন্নমত পোষণকারীরা মনে করেন, এখনই টেকসই ফেডারেল বিনিয়োগ ছাড়া শিক্ষা বৈষম্য আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো মৌলিক সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং এখনই সমাধানের উদ্যোগ না নিলে শিক্ষার এই অবনমন ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।