Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকদাম নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যপণ্যের শুল্ক ছাড় ঘোষণা

দাম নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যপণ্যের শুল্ক ছাড় ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে আমদানি শুল্ক নীতিতে বড় পরিবর্তন আনলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। গতকাল শুক্রবার গরুর মাংস, টমেটো, কলাসহ প্রতিদিনের ব্যবহৃত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কঠোর শুল্কনীতি অনুসরণ করে আসা বর্তমান প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এতদিন প্রশাসন দাবি করে আসছিল, চলতি বছরের শুরু থেকে আরোপ করা অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক দেশটির মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে না। তবে খাদ্যদ্রব্যসহ ভোগ্যপণ্যের দ্রুত দাম বাড়ায় এই ব্যাখ্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছিল। সর্বশেষ ঘোষণায় প্রশাসন জানায়, ক্রমবর্ধমান ভোক্তামূল্যের চাপ কমাতেই এই শুল্কছাড় দেওয়া হলো।

এর পাশাপাশি একই দিনে প্রশাসন কয়েকটি কাঠামোগত বাণিজ্যচুক্তির ইঙ্গিত দেয়। এসব চুক্তি চূড়ান্ত হলে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও এল সালভাদর থেকে আমদানি করা বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ও সাধারণ সামগ্রীর ওপরও শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরের শেষ নাগাদ আরও কয়েকটি দেশকে একই ধরনের শুল্ক সুবিধার আওতায় আনা হতে পারে।

শুক্রবার যে পণ্যগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই মার্কিন ভোক্তাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। গত এক বছরে এসব পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্সের সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে গরুর কিমা মাংসের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। স্টেকের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার। একই সময়ে কলার দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ এবং টমেটোর দাম ১ শতাংশ।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষভাবে আলোচনায় উঠেছে। প্রেসিডেন্টও বিষয়টি নিয়ে বেশ সক্রিয় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, দেশে দামের যে উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তার জন্য বর্তমান প্রশাসনের শুল্কনীতি নয়; বরং পূর্ববর্তী প্রশাসনের নীতিগত সিদ্ধান্তই দায়ী। তাঁর মতে, আগের নীতির ধারাবাহিক প্রভাবই বর্তমান পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি শুল্কই মূল্যবৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অতিরিক্ত শুল্কও যুক্ত হওয়ায় পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী বছরে ভোগ্যপণ্যের চাপ আরও বাড়তে পারে, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান শুল্কের অতিরিক্ত ব্যয় সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপাতে শুরু করেছে।

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সামাল দিতে তাদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে শুল্ক ছাড় নীতির কার্যকারিতা কেমন হবে এখন সেটিই দেখার বিষয়। তবে তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসেবে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments