চীনা খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান একটি জনপ্রিয় পুতুলের নতুন মিনি সংস্করণ বাজারে আনার পর বিক্রিতে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ‘দানব-থিম’ ভিত্তিক এই দাঁতবিশিষ্ট লাবুবু পুতুলের ছোট সংস্করণ আগস্ট মাসে বাজারে আসার পর থেকে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
কোম্পানির প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া তিন মাসের প্রান্তিকে তাদের বৈশ্বিক আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। ছোট আকৃতির এই পুতুলটির মুখে ধারালো দাঁত এবং সুচালো কান থাকায় এটি একদিকে ভয়ঙ্কর এবং অন্যদিকে কৌতুকপূর্ণ চেহারায় দর্শকদের আকর্ষণ করে। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যই পুতুলটিকে সংগ্রাহক ও কম বয়সী শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাপী দোকানগুলোতে লাবুবু কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চীনের বাইরে এই বিক্রি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে পুতুলটির জনপ্রিয়তা তুমুল বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে নামকরা তারকারা পুতুলটির প্রচারনায় যুক্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে কোকা-কোলা ও জাপানি জনপ্রিয় মাঙ্গা সিরিজ ওয়ান পিসের সঙ্গে অংশীদারিত্ব লাবুবুর পরিচিতি আরও বিস্তৃত করেছে।
গত এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে লাবুবুর বিক্রি ১,২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, এবং ইউরোপে ৭০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বেচাকেনার উত্থান কোম্পানির শেয়ারবাজারের অবস্থানকেও শক্তিশালী করেছে। হংকং শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪,৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
২০১৯ সালে বাজারে আসার পর থেকে লাবুবু পুতুলের সাফল্য প্রতিষ্ঠানটিকে একটি বৈশ্বিক বড় খুচরা বিক্রেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোম্পানির দুই হাজারের বেশি দোকান ও ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। ২০২০ সালে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের শেয়ারদর ২৮০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুতুলটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘ব্লাইন্ড বক্স’ প্যাকেজিং কৌশলের জন্য। এই প্যাকেট কেনার আগে ভেতরে থাকা খেলনা দেখা যায় না, ফলে ক্রেতাদের মধ্যে উত্তেজনা ও কৌতূহল তৈরি হয়। তবে সমালোচকরা এটিকে অনেকে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেন, এটি অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটাকে উৎসাহিত করে।
ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে অতিরিক্ত মূল্যায়িত হতে পারে। তারা উল্লেখ করেছেন যে, যদিও বর্তমানে পুতুলটির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই আকর্ষণ ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। খেলনার বাজারে প্রতিযোগিতা, ক্রেতাদের চাহিদার পরিবর্তন এবং নতুন পণ্যের আগমন সবই প্রভাব ফেলতে পারে।
কর্মকর্তাদের মতে, লাবুবুর এই সাফল্য শুধু বিক্রির পরিসংখ্যানে নয়, বরং সাংস্কৃতিক প্রভাবেও প্রতিফলিত হচ্ছে। ক্রেতারা শুধু খেলনা কেনাই নয়, এটি সংগ্রহ করার মধ্যেও আনন্দ খুঁজছেন। এই অনন্যতা, ব্র্যান্ড সহযোগিতা, এবং সামাজিক মিডিয়ার প্রচার মিলিতভাবে পুতুলটিকে একটি বৈশ্বিক হিট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ফলে দাঁতবিশিষ্ট লাবুবু পুতুল এখন কেবল একটি খেলনা নয়, এটি একটি কালচারাল আইকন। ব্যবসায়িক দিক থেকে কোম্পানির আয়ের উত্থান এবং শেয়ারবাজারের সাফল্য এটিকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সাফল্যের উদাহরণ হিসেবেও তুলে ধরেছে।



