Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনদক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য জি২০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য জি২০ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জি২০ সম্মেলন। তবে, এই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তারা এই সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে “দুঃখজনক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তে সম্মেলনের সফলতায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তাদের মতে, একটি সদস্য রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির এই বৈঠকের কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে আমাদের কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না। জি২০ এর উদ্দেশ্যই হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করা।” তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর কোনো ধরণের সংগঠিত নিপীড়ন বা গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরাধ ও সামাজিক সমস্যা সব সম্প্রদায়ের মানুষকেই প্রভাবিত করছে, কেবল একটি গোষ্ঠীকে নয়।”

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকানার বংশোদ্ভূত কিছু মানুষের জমি ও খামার অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর সহিংসতা বাড়ছে। তবে এই অভিযোগ দেশটির আদালত ও সরকার উভয়ই অস্বীকার করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এক আদালত গত ফেব্রুয়ারিতেই এই ধরনের দাবিকে “কাল্পনিক ও অবিশ্বাস্য” বলে রায় দিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পিত নিপীড়ন চলছে না এবং এই ধরনের অভিযোগ ইতিহাস বিকৃতির শামিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আফ্রিকানারদের শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা ঐতিহাসিকভাবে ভুল। এই সম্প্রদায়টি একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, যার বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা যায় না।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এর আগেও একাধিকবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছে। তারা এমনকি কিছু আফ্রিকানার নাগরিককে শরণার্থী মর্যাদাও দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শরণার্থী প্রস্তাবটি দেশটির নাগরিকদের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলেনি।

প্রসঙ্গত, জি২০ ফোরামটি গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে এশীয় অর্থনৈতিক সংকটের পর। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোকে একত্রিত করে বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোই এর উদ্দেশ্য ছিল। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য দেশগুলো বিশ্বের মোট সম্পদের প্রায় ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো জি২০ নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সময়। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সম্মেলন, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

এই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা বৈশ্বিক অর্থনীতি, উন্নয়ন, জলবায়ু এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ না করা নিঃসন্দেহে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও সম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মূল উদ্দেশ্য—বিশ্ব অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি—বাস্তবায়িত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments